অবশেষে অবসান ১৭ দিনের প্রতীক্ষার, টানেল থেকে উদ্ধার ৪১ শ্রমিক

অনলাইন ডেস্ক
অবশেষে অবসান হল ১৭ দিনের প্রতীক্ষার। ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর টানেলে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে একে একে উদ্ধার করলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র সেনারা। তাদের উদ্ধার করতে খোঁড়া ‘ইঁদুরের গর্ত’ (যার পোশাকি নাম ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’) দিয়েই উদ্ধার করা হয় টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৭টা ৫২ মিনিটের দিকে টানেল থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসেন ঝাড়খণ্ডের বিজয় হোরো। তার পরে একে একে বাকিরা। রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে শেষ হয় ‘অপারেশন জিন্দেগি’। উদ্ধারের পরে আগে থেকে তৈরি রাখা গ্রিন করিডর দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরকাশীর চিনিয়ালিসৌর হাসপাতালে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে ধস নামে। এতে ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এতদিন ধরে তাদের বের করে আনার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভিতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকায় তৈরি খননযন্ত্র। উদ্ধারকাজ থমকে যায়। উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত টানেলের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে অনবরত যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
টানেলে থাকাকালীন উত্তরকাশীর শ্রমিকদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গত মঙ্গলবার। পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠান উদ্ধারকারীরা। সেখানেই দেখা যায় টানেলের ভিতর কী ভাবে, কী অবস্থায় তারা রয়েছেন। খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় দু’ভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। খননযন্ত্রের সব টুকরোগুলি টানেলে থেকে বের করে আনার পর খনি শ্রমিকেরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। ১০-১২ মিটার পথ সে ভাবেই খুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া। ইঁদুরের কায়দায় গর্ত খুঁড়ে টানেল থেকে শ্রমিকদের বের করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এছাড়া টানেলের উপর দিক থেকে উল্লম্ব ভাবে খোঁড়ার কাজও শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার।

‘ইঁদুরের গর্ত খনন’-এর জন্য প্রথম দফায় ১২ জন বিশেষজ্ঞ খনিশ্রমিককে উদ্ধারস্থলে আনা হয়। তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এগোন। টানেলের ভিতরে পৌঁছে এক জন দেওয়াল খুঁড়তে থাকেন। অন্য জন সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন তা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ বহন করে টানেলের বাইরে নিয়ে যায়। শেয পর্যন্ত সেই পদ্ধতিতেই এল সাফল্য। ‘ইঁদুরের গর্ত’ খোঁড়ার পাশাপাশি সিল্কিয়ারায় উপর থেকে চলছে উল্লম্ব খনন। পাহাড়ের উপর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি খুঁড়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। এভাবেই দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও উৎকণ্ঠার মাঝে ১৭ দিনের দুঃস্বপ্নময় এক যাত্রার পর বাইরের আলোর মুখ দেখছেন এই শ্রমিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights