অভিবাসীদের মাথায় হাত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এজেন্টরা এক হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ফেডারেল কর্মকর্তারা রবিবার জানিয়েছেন। এভাবেই বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ১৪ শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছে আইস। ধরপাকড় অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের মাথায় এখন হাত। চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরাও।

সূত্র জানায়, দৈনিক ৪-৫ শত জন নয়, কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৫০০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। অভিবাসী ধরপাকড়ের দায়িত্ব পালনকারী আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ২৫টি ফিল্ড অফিসের প্রত্যেকটিকে দৈনিক কমপক্ষে ৭৫ জন অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার করতে হবে হোয়াইট হাউসের ন্যূনতম প্রত্যাশা পূরণের জন্যে। যদিও ট্রাম্পের সীমান্ত সুরক্ষা সম্পর্কিত মুখ্য কর্মকর্তা টম হোম্যান এবিসি টিভিতে রবিবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা শুধু অবৈধদের মধ্যে গুরুতর অপরাধী এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তারে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এমনি অবস্থায় হোয়াইট হাউসের কোটা পালন করতে হলে গুরুতর অপরাধী ছাড়াও গ্রেপ্তার হবে অনেক অবৈধ অভিবাসী। টম হোম্যান বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের জন্যে আমরা স্টেট এবং স্থানীয় প্রশাসনেরও সহযোগিতা চেয়েছি। ফেডারেল পুলিশ তো আছেই এ অভিযানে।

উল্লেখ্য, শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে মাত্র ১ হাজার ৪০০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের সংবাদে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরও উল্লেখ্য, বর্তমানে ১ কোটি ১৭ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী রয়েছে আমেরিকায়। এর মধ্যে গুরুতর অপরাধীর সংখ্যা কোনোভাবেই ৫ লাখের বেশি হবে না। তবে গত সপ্তাহেই ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনে কংগ্রেসে পাস হওয়া একটি বিল অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে যারা ট্রাফিক ভায়োলেশনের জন্যে জরিমানা দিয়েছেন কিংবা সাবওয়েতে টিকিট ছাড়া প্রবেশকালে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অথবা স্টোরে ছোটখাটো চুরির জন্যে ধরা পড়েছিলেন- এমন মামুলি অপরাধে লিপ্তদেরকেও গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর এটাই হচ্ছে সমগ্র কম্যুনিটিতে আতঙ্কের মূল কারণ। ট্রাম্পের এমন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারির ২ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমস/ইপসোস জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারের ৫৫% অবৈধদের অবিলম্বে বহিষ্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮৮% বলেছেন যে, অবৈধদের মধ্যে যারা অপরাধের জন্যে দণ্ডিত/চিহ্নিত তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। জরিপে অংশগ্রহণকারী ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানের সিংহভাগই মনে করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন ভেঙে পড়েছে। এটি ঢেলে সাজানোর বহু পুরনো দাবিটি পূরণের সময় এখন। আরেক খবর অনুযায়ী, এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে- শেষ পর্যন্ত অভিবাসী প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে কলম্বিয়া। সে কারণে ওয়াশিংটন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না। কলম্বিয়া যতক্ষণ এই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে, ততক্ষণ তাদের ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের খসড়া আদেশগুলো ‘সংরক্ষিত থাকবে’ বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধের ট্রাম্পের এই হুমকি এবং তার সুফল আসায় অন্যদেশগুলোর জন্যেও একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন। আর ট্রাম্পের এমন মনোভাবের মধ্য দিয়েই গুরুতর অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদেরকে তাড়ানোর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, কলরাডো স্টেটের ডেনভারে একটি নাইট ক্লাবে রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে আইসিস (ইসলামিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক)-এর ৫০ জঙ্গিকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরা ভেনেজুয়েলার কারাগার থেকে পালিয়ে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল বলে গ্রেপ্তার অভিযানের পর আইসের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights