আবারও জ্বলছে মণিপুর

প্রতিদিন ডেস্ক
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে আবারও ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। গতকালের ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। সকালে রাজ্যের জিরিবাম জেলায় ড্রোন-রকেট সহযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, এনই, এনডিটিভি

খবরে বলা হয়, মণিপুরের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় গতকাল ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলি ঘটেছে। ভয়াবহ এ সহিংসতার পর জিরিবামে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জিরিবামের বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশনা দিয়েছেন, জরুরি অবস্থা চলাকালে একসঙ্গে পাঁচজন বা তার বেশি মানুষ জড়ো হতে এবং সঙ্গে কেউ অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবেন না। যেসব অস্ত্র বহন করা যাবে না তার মধ্যে রয়েছে পিস্তল, তলোয়ার, লাঠি, পাথর এবং যে কোনো ধারালো বস্তু। এমনকি বিয়ে অনুষ্ঠান ও মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের ক্ষেত্রেও বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের এসপির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সরকারি অনুমতি ছাড়া এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা নুংচাপ্পি গ্রামে আক্রমণ করলে ইউরেম্বাম কুলেন্দ্র সিং নামে ৬৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তি নিহত হন। গ্রামটি মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২২৯ কিলোমিটার দূরে। অন্য পাঁচজন নিহত হয়েছে মেইতেই সম্প্রদায়ের সশস্ত্র দল এবং কুকি উপজাতিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে। এ দলগুলো নিজেদের ‘গ্রাম প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। পুলিশ বলেছে, খবর পেয়ে জিরিবামের এসপিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়। তখন পুলিশ ‘পাল্টা জবাব দেয় এবং গোলাগুলি নিয়ন্ত্রণে আনে।’ উল্লেখ্য, এর আগের দিন শুক্রবারও রাজ্যের মইরাং শহরে কুকি বিদ্রোহীদের রকেটচালিত বোমা হামলায় মেইতেই সম্প্রদায়ের একজন বয়স্ক ব্যক্তি নিহত ও ছয়জন আহত হয়। এ ঘটনার পর গতকাল থেকে রাজ্যের স্কুলগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর গুলি ও বোমার আঘাতে রাজ্যটিতে দুজন নিহত হয়। আহত হয় পুলিশ-সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন। অভিযোগ, কুকি সন্ত্রাসীরা একটি মেইতেই গ্রামে হামলা চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে থেকে জাতিগত সহিংসতার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি কখনোই। ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো মেইতেই জনজাতি। তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল, তাদের তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু এ দাবির বিরোধিতা করে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তফসিলি উপজাতি ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং জরিপ নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল মণিপুরে। এ সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে কয়েক শ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights