আলোচনায় বিদেশি বিনিয়োগ
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
বিদায়ি ২০২৪ সালজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সৌদি আরব তথা বিদেশি বিনিয়োগ। এ বছরই প্রথম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায় কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান। সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল’ (আরএসজিটি) বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ‘ল্যান্ডলর্ড মডেল’ বা জমিদারি প্রথার নতুন যুগে প্রবেশ করে। এ মডেলে বন্দরের জমিতে স্থাপনা তৈরি ও চ্যানেল ব্যবহার করে বেসরকারি খাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। সেখান থেকে বন্দর নির্দিষ্ট পরিমাণ হ্যান্ডলিং ও অন্যান্য চার্জ পায়। চুক্তির সময়সীমা শেষ হলে পুরো স্থাপনা বা টার্মিনালের মালিকানা পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে স্থাপনা নির্মাণে সরকারকে বড় রকমের বিনিয়োগ করতে হয় না। তুলনামূলক কম বিনিয়োগে বন্দরের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ পদ্ধতিতে সরকার শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকায় থাকে।
এ ছাড়া আলোচনায় ছিল বছরের শেষ দিকে চারটি তেলবাহী জাহাজে আগুনের ঘটনা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইআরএল জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতিতে আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়। এর চার দিন পর ৪ অক্টোবর বন্দরের বহির্নোঙরে বিএসসির অপর জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভে আগ্নিকান্ডে মারা যান আরও একজন। দুটি জাহাজই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবশেষ ১৩ অক্টোবর কুতুবদিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি মাদার ট্যাংকার ও একটি লাইটার ট্যাংকারে অগ্নিকান্ড ঘটে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে পিসিটি প্রথম টার্মিনাল, যেখানে ল্যান্ডলর্ড পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর আগে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান বন্দরের কোনো টার্মিনাল পরিচালনার সুযোগ পায়নি। দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৯২ শতাংশের বেশি সমুদ্রকেন্দ্রিক বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হয়। পুরোদমে কাজ শুরু হলে পিসিটিতে বছরে ৬ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।
গত ১০ জুন নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) ‘মায়েরস্ক দাভাও’ নামের জাহাজ ভিড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতভাবে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রেড সি গেটওয়ের সঙ্গে পিসিটি পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছাকাছি এ পিসিটি নির্মাণে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়ন ছিল ১ হাজার কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী আরএসজিটি আগামী ২২ বছর চারটি জেটি সংবলিত টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক বছর ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরসহ প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল এবং লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে আসছিল। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ’বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারির বিষয়টি একটি দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিকে সম্পৃক্ত করেছে। আমরা বিশে^র শীর্ষস্থানীয় টার্মিনাল অপারেটর এপিএম এর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি পিপিপিএ কর্তৃপক্ষের প্রক্রিয়ায় রয়েছে’।