কান পরিষ্কার পেশায় জসিমের ২ যুগ পার
ফেনী প্রতিনিধিঃ
রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম, বাস টার্মিনাল, দিঘির পাড়, ফুটপাত ও হাট-বাজারে দেখতে পাওয়া যায় এদের। এরা সবার কাছে কানটানা বলে পরিচিত। ফেনীর ভাষায় যাদেরকে কানটাইয়া ও বলা হয়। নিজেকে কখনো কানের ডাক্তার আবার কখনো কখনো কানের কবিরাজ বলেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।
শরীরে বেল্টে আটকানো একটি বাক্স আর মাথায় সার্চ লাইটের মতো একটি যন্ত্র থাকে এদের কাছে। বাক্সটিতে কয়েকটি বোতল ও ছোট ছোট কিছু যন্ত্র থাকে। বোতলগুলোর অধিকাংশই খালি থাকে। শুধু দুটি বোতলে রাখা হয় রাসায়নিক দ্রব্য হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড।
মানুষের কানে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করেন কানটানারা। ফুটপাতের মানুষও এদের থেকে কান পরিষ্কার করে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে, শিক্ষিত মানুষরা অনীহা প্রকাশ করেন। আর, প্রতি কান পরিষ্কার করতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা নিয়ে থাকে এরা। যেখান থেকে প্রতিদিন আয় হয় ৭০০-৮০০ টাকা।
শরিয়তপুরের বাসিন্দা মোঃ জসিম। দীর্ঘ ২ যুগ ধরে ফেনীতে মানুষের কান পরিষ্কার করে আসছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের ঐতিহ্যবাহী জনবহুল রাজাঝির দিঘির পাড়ে বসে মানুষের কান পরিষ্কার করেন তিনি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। এভাবে দীর্ঘ বছর এই পেশাটিকে আঁকড়ে ধরে আছেন জসিম।
অভাবের সংসারে লেখাপড়া সেভাবে করতে পারেননি। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে জীবিকার সন্ধানে নামতে হয় তাকে। ২০০০ সালের দিকে শরীয়তপুর জেলার এক চিকিৎসকের কাছে প্রশিক্ষণ নেন জসিম। সেখানে ১ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই শুরু করেন কান পরিষ্কার করার কাজ। সেই থেকে শুরু। আজ পর্যন্ত এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন জসিম। প্রায় ২০ বছর ধরে ফেনীতে এসে মানুষের কান পরিষ্কারের কাজ করছেন।
কান পরিষ্কারক মোঃ জসিম (৪২) বলেন, আমরা নিখুঁতভাবে মানুষের কান পরিষ্কার করি। কানের ভেতর যেকোনো কিছু প্রবেশ করলে, সেটি কোনো না কোনো প্রন্থায় কানের ক্ষতিসাধন ছাড়াই বের করতে পারবো। আমাদের কাছে সাধারণত নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ কান পরিষ্কার করে নেন। খুব কমসংখ্যক শিক্ষিত মানুষ পান বলে জানান তিনি। অন্যের কান সময় ধরে পরিষ্কার করলেও নিজের কান পরিষ্কার করার সময় পান না জসিম। জসিম বলেন, সকালে বাড়ি থেইকা বাইর হইয়া রাতে ফিরি। আমার কাছে পুরুষ মানুষ কান বেশি সাফ করায়। মহিলারা পুরুষ মানুষকে দিয়া কান সাফ করাইতে চায় না। মাঝে মাঝে দুই একজন মহিলা সাফ করায়।
জসিম আরো বলেন, অনেক মানুষ কানের রোগ নিয়ে তার কাছে আসেন। তিনি তাদের চিকিৎসা দিয়ে সফল হচ্ছেন। কানের ভেতর হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে কানকে সচল রাখেন তিনি।
হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই দ্রব্যটি পরিমাণ মতো ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া, এ পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জসিম কান পরিষ্কার করছেন আর বৃদ্ধ আইয়ুব চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। আইয়ুব জানান, আরামে তার ঘুম চলে আসছে। প্রতি মাসে একবার করে কান পরিষ্কার করায় সে। কান পরিষ্কার না করালে কানের ভেতর চুলকায় আর গমগম করে। এরা কানের ভেতর মরা চামড়া বাহির কইরা আনে। যেইটা কাঠি কিংবা কটন বাট দিয়া বাহির হয় না। এ কারণে যারা কান পরিষ্কার করে তাদের কাছে আমি কান পরিষ্কার করাই।
কান পরিষ্কার করতে আসা জয় (২০) বলেন, তিনি মাঝে মধ্যে কানটানার কাছ থেকে কান পরিষ্কার করে নেন। তারা যখন কান পরিষ্কার করে তখন ভালোই লাগে। কানের মধ্যে কিছু একটা ঢেলে দিয়ে তারপর কান পরিষ্কার করে দেন তারা।
ফেনী পৌর হর্কাস মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আলমগীর বলেন, আমি সব সময় কান পরিষ্কার করাই না। যখন কান পরিষ্কার করার লোক সামনে পাই তখন করাই। কখনও দেখা যায় দুই মাসে একবার করাই আবার ছয় মাসে একদিন করাই। আমরা খোলা জায়গায় বইসা তরকারি বিক্রি করি। এজন্য কানে বেশি ময়লা ঢোকে।