কাল মধ্যরাত থেকে ইলিশ আহরণে নামবে জেলেরা

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২ নভেম্বর রাত ১২টায়। এজন্য জেলেরা নদীতে ইলিশ আহরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌ সীমানায় ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাছ আহরণ করতে নামবেন। তবে মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে জেলেদের অভিযোগ রয়েছে।

তবে জেলা টাস্কফোর্সের দাবি, মা ইলিশ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। জেলেদের অধিকাংশই গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ আহরণ করে থাকে। আইন অমান্য করে মা ইলিশ ধরায় এ পর্যন্ত ৩৪৮ জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২২ দিন বেকার থাকার পর জেলেরা ইলিশ ধরতে ইতিমধ্যে নৌকা ও জাল মেরামত করে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সরেজমিন সদর উপজেলার দোকানঘর এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, জাল ও নৌকা মেরামত কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জেলে রমজান শেখ, রাসেল বেপারী বলেন, মা ইলিশ না ধরার জন্য সরকার যে অভিযান দেয়, আমরা তা মানি। তবে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকার অসাধু জেলেরা এসে অধিকাংশ ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা কোনো মাছ পাই না। ঋণ করে নতুন জাল, নৌকা মেরামত করতে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ অবস্থায় পড়তে হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখনকার বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ চালানো আমাদের জন্য অসম্ভব। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হলে কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারবে না। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে থাকি। বাইরের অসাধু জেলেরা এসে মা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। এভাবে অভিযান দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত ছিল। জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ মিলে অভিযান সফল করেছি। এরপরেও কিছু অসাধু জেলে মাছ আহরণ করেছে। টাস্কফোর্স ৫১৩টি অভিযান ও ৭৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। অভিযানকালে ৩৯১টি মামলায় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩৪৮ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আমরা আশা করছি এই অভিযানের ফলে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। যা ইলিশের জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। অভিযানের সময় মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য সরকার এবছর অভিযানের আগেই ২০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights