কেন শুক্র পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে?

অনলাইন ডেস্ক

সূর্য থেকে দূরত্বের হিসাবে সৌরজগতের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র। এই গ্রহটিকে অনেক সময় পৃথিবীর ‘বোন’ বলেও ডাকা হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবী ও শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচরণে বেশ মিল রয়েছে। তবে নতুন একটি তথ্য বিজ্ঞানীদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। একসময় শুক্র নামের গ্রহটিতে বেশ পানি থাকলেও এখন তা প্রায় শূন্যের কোঠায়।

সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডার’-এর গবেষকরা শুক্র নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করেছেন।

এই গবেষণায় গবেষকরা শুক্রে পানিশূন্যতার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করার মতো কারণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণায় শুক্রের বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন এমন প্রক্রিয়া পাওয়া গেছে, যার ফলে সম্ভবত গ্রহটি থেকে পানি হারিয়ে গেছে।

শুক্র ও পৃথিবী আকারে প্রায় সমান। একসময় ধারণা করা হত, গ্রহ দুটিতে একই পরিমাণ পানি আছে। তবে এখন পৃথিবীর তুলনায় একেবারে শুষ্ক গ্রহটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পৃথিবীর সব পানিকে যদি ভূপৃষ্ঠে সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তবে তা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর একটি স্তর তৈরি হতে পারে। তবে শুক্রের বেলায় ওই স্তরের গভীরতা মাত্র তিন সেন্টিমিটার।

শুক্রের পানি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝার জন্য HCO+ নামের একটি অণুর ওপর মনযোগ দিয়েছিলেন গবেষকরা। যা হাইড্রোজেন, কার্বন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত। তাদের দাবি, শুক্র থেকে পানি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সন্দেহ তাদের।

কলোরাডোভিত্তিক পরীক্ষাগার ‘ল্যাবরেটরি ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যান্ড স্পেস ফিজিক্স (এলএএসপি)’-এর গবেষণা বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার সহ-প্রধান লেখক এরিন ক্যাঙ্গির ব্যাখ্যা অনুসারে, শুক্র কীভাবে নিজের পানি হারিয়েছে তা বোঝা ছায়াপথের অন্যান্য গ্রহের পানি ধারণ সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

যে প্রক্রিয়ায় শুক্র থেকে পানি হারিয়েছিল, তা ‘ডিসসোশিয়েটিভ রিকম্বিনেশন’ নামে পরিচিত, যার সম্পৃক্ততা রয়েছে বায়ুমণ্ডলে HCO+ অণু ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে।

এ ভাঙনের ফলে হাইড্রোজেন পরমাণু নির্গত হয়, যা পরবর্তীতে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন গবেষণাটি থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এ প্রক্রিয়ায় দৈনিক প্রায় দ্বিগুণ পানি হারাচ্ছে শুক্র, যা এর আগের বিভিন্ন অনুমানেও উঠে এসেছে।

এ গবেষণার আরেক সহ-প্রধান লেখক ‘এলএএসপি’র মাইকেল শ্যাফিন শুক্রেরপানিশূন্য হওয়ার বিষয়টিকে তুলনা করেছেন একটি পানির বোতল খালি করা ও এর শেষ কয়েক ফোঁটা পর্যন্ত বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনা দেখার সঙ্গে।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, গ্রহটির শুষ্কতায় বড় অবদান রাখে হাইড্রোজেন পরমাণু হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি।

এ প্রক্রিয়ায় HCO+-এর গুরুত্ব থাকার পরও বিজ্ঞানীরা এখনও সরাসরি শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে গবেষকদের দাবি, অতীতে শুক্রে পাঠানো বিভিন্ন মিশনে এইসব অণু শনাক্ত করার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights