চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারও পদ্মায় তীব্র ভাঙন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে আবারও ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সোমবার পদ্মা নদীর ভাঙনে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন চললেও প্রতিরোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি এলাকা থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ছরশিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিমত, নদীর পাড়ের ঘাস, কাশবনসহ অন্যান্য বন উজাড় করে ফেলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে পানির তোড়ে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এবার নদী ভাঙন মৌসুমে নিচের দিকে মাটি দেবে গিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, নদী ভাঙনের হুমকিতে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, দোতলা বিশিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্র দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণপুর এমএ উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণপুর বাতাস মোড় বাজার, কয়েক হাজার কৃষকের আবাদি জমিসহ প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি। ইতিপূর্বে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন দেখা দেওয়ার পর কিছুদিন ভাঙন স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু গত শনিবার সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্নাপাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়। এই ভাঙনে ১ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাসহ আবাদিজমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে, আকস্মিক পদ্মার ভাঙনে ভিটামাটি হারানো মানুষজন অন্যের জমিতে ঠাঁই নিয়েছেন।
ইসহাক আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে নদী ভাঙনে সৃষ্টি হয়। বর্তমানে টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলের তোড়ে নদী ভাঙন হচ্ছে। প্রতি বছর এমন হলেও ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

এদিকে, নদী ভাঙন আতঙ্কে সদর উপজেলার নারায়ণপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও নারায়ণপুর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে।

এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন আতঙ্কে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে খুব শিগগির মাদ্রাসাটিতে পাঠদান চালু হবে।

নারায়ণপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙন তীব্র হওয়ায় ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। মানুষ তাদের কাছে নদী রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চায়। এই মুহূর্তে ইউনিয়নবাসী কোনো দান নয়, শুধু এলাকা রক্ষায় বাঁধ চায়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ভাঙনের খবর সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো চরাঞ্চল। তাই তাৎক্ষণিক অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানো অসম্ভব। কারণ একশো কিংবা দুই’শ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙলে একটা অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া যেত। কিন্তু ব্যাপক এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায়, তা সম্ভব না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights