জরায়ুমুখ ক্যান্সার ঝুঁকিতে ২০ ভাগ নারী
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (সিআইএমসি) হাসপাতালে ১১০ জন নারীর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২২ জনের ক্যান্সার পূর্ববর্তী প্রাদুর্ভাব পাওয়া গেছে। যা মোট পরীক্ষার ২০ শতাংশ। ফলে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে দুজন জরায়ুমুখ ক্যান্সার ঝুঁকিতে আছেন।
সিআইএমসি হাসপাতালে ‘জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব ও নমুনা পরীক্ষা’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণায় বলা হয়, ৪১ শতাংশ নারীর ৪০-৪৯ বছর এবং ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশের ৩০-৩৯ বছর বয়সের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত নারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশের চারজনের বেশি সন্তান আছে এবং ৪০ শতাংশ নারীর বিবাহ সময়কাল ১০ বছরের বেশি।
সিআইএমসি হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অব্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা চৌধুরীর নেতৃত্ব পরিচালিত গবেষণায় যুক্ত ছিলেন হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. নাসরিন বানু, বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ডা. মুসলিনা আখতার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীমা আকতার এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. তাসলিমা আকতার। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিআইএমসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১১০ জন নারীর মধ্যে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫-৫৫ বছর বয়সী নারী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী নারীরাই জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ৬৫ শতাংশ নারীর মধ্যে তলপেটে ব্যথা এবং ৬৩ শতাংশের মধ্যে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এটি শতভাগ নিরাময়যোগ্য রোগ। দরকার কেবল সচেতনতা। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারমুক্ত বিশ্ব শীর্ষক স্লোগান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইএমসি হাসপাতালে জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিং এবং এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত আছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ-জাতিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারমুক্ত বিশ্ব করতে সাহায্য করবে। সিআইএমসি হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সারটি একটু সচেতন-সতর্ক হলেই শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ জন্য আমরা মনে করি, হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে নারীদের জন্য সহজলভ্য করা, কিশোরীদের এইচপিভি ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পিতামাতাকে উদ্বুদ্ধ এবং জনগণের মধ্যে ক্যান্সার সচেতনতা তৈরি করা। এর মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার নির্মূল সম্ভব। জানা যায়, বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ জরায়ুমুখের ক্যান্সার। দেশে প্রতিবছর জরায়ু ক্যান্সারে নতুনভাবে প্রায় ১১ হাজার ৯৫৬ জন নারী আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৬ হাজার ৫৮২ জন মারা যান। বর্তমানে এ রোগে প্রতি দুই মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। তবে এ রোগ প্রতিরোধে দেশে বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচি এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালু রয়েছে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে রয়েছে- ভায়া, প্যাপস এবং এইচপিবি ডিএনএ। সরকারিভাবে জেলা-উপজেলায় প্রায় ৪০০টি কেন্দ্রে এই স্ক্রিনিং চালু আছে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের পূর্ববর্তী অবস্থা দেখা হয়। এই ক্যান্সার পূর্ববর্তী অবস্থায় শনাক্ত হলে শতভাগ নিরাময় করা সম্ভব।