দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন বিলকিছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
নিজের চোখে পৃথিবীর আলো দেখতে না পেলেও প্রতিনিয়ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিলকিস খাতুন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হেরে গেছে তার অন্ধত্ব। নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে একজন সফল শিক্ষক হিসেবে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত।

জানা যায়, যমুনা বাঙালি বিধৌত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের দেবডাঙ্গা গ্রামের মৃত গিয়াস মোল্লার মেয়ে বিলকিস খাতুন। তিনি জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নিজ চন্দন বাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন।

পরে তিনি ২০২৩ সালের ৩০ মে সারিয়াকান্দি উপজেলার দেবডাঙ্গা কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। কর্মস্থলে খুব আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন বিলকিছ। ব্রেইল পদ্ধতিতে তিনি ক্লাস পরিচালনা করেন। এতে শিক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হয় না।

শিক্ষার্থীরা জানান, ম্যাডাম যখন আমাদের পড়ায় তা আমাদের বইয়ের পড়ার সাথে মিলে যায়। পড়া বুঝতে আমাদের কোনও সমস্যা হয় না। স্বাভাবিকভাবেই পড়া বুঝা যায়।

শিক্ষক বিলকিস খাতুন জানান, ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে যখন সবাই স্কুলে আসা-যাওয়া করতো তখন আমার খুব খারাপ লাগতো। তাদের দেখাদেখি আমিও স্কুলে যাতয়াত শুরু করি। স্কুলের ক্লাসে শিক্ষকদের কথা শুনতে পারলেও ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে পারতাম না। এরপর আর স্কুলে আসা যাওয়া হয়নি। আমার আপন ভাইও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সে কোনও এক মাধ্যমে অন্ধদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে আমাকে রাজশাহী পিএইচটি সেন্টারে ভর্তি করায়। এরপর আমার মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ হয় জয়পুরহাটের খনজনপুর মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে।

তিনি আরও জানান, একইভাবে ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করি। স্নাতক শেষ করে প্রাইমারিতে আবেদন করি এবং প্রথমবার পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হই। এরপর ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলার নিজ চন্দন বাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি।

বিলকিস খাতুনের সহকর্মীরা জানান, বিলকিস খাতুন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও আমরা তাকে কখনও আমাদের চেয়ে আলাদা মনে করি না। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। যদিও তিনি নিজের কাজগুলো নিজেই করে থাকেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে পাঠদান করান।

দেবডাঙ্গা কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী জানান, বিলকিস খাতুন তার অদম্য প্রতিভার পরিচয় দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছেন। আমরা আন্তরিকতার সাথে তার পাঠদানের কৌশলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। তার পাঠদানে শিক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights