নতুন ওয়ার্ডে খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ ছবি : জয়ীতা রায়

হাসান ইমন
রাজধানীর দক্ষিণখানসহ আশপাশের এলাকার প্রধান সব সড়কে দীর্ঘদিন থেকে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। মাসের পর মাস যায় কিন্তু সড়ক আর ঠিক হয় না। সবগুলো সড়ক এখন অচল। সড়কগুলোর অবস্থা এমন যে, হেঁটে চলাচল করাও দায়। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলা তো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে এই এলাকার ভোগান্তি আরও তীব্র হয়। রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

ইউনিয়ন থেকে ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন যুক্ত হয়েছে দক্ষিণখান। সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার পর আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি নাগরিক বঞ্চনা, নির্বিঘ্ন নয় এলাকার সড়কে যান চলাচল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে রাখা রাস্তার কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবন এখন দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আসছে বর্ষায় দুর্ভোগ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা-২ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন কসাইবাড়ি রেল ক্রসিং থেকে দক্ষিণখান পেরিয়ে উত্তরখানের কাচকুরা পর্যন্ত এই সড়ক সোয়া পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে কসাইবাড়ি রেল ক্রসিং থেকে দক্ষিণখানের মধুবাগ পর্যন্ত অংশের (এস এম মোজাম্মেল হক সড়ক) প্রায় পুরোটা সড়ক বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। এই পথের দূরত্ব প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার। স্থানীয় বাসিন্দাদের কখনো নোংরা পানিতে পা ডুবিয়ে, আবার কখনো নর্দমা নির্মাণের জন্য খনন করে ফেলে রাখা মাটির স্তূপ ডিঙিয়ে চলতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। স্থানীয়দের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় স্বজনদের। একই অবস্থা দক্ষিণখান কাঁচাবাজার থেকে মাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত, আজমপুর কাঁচাবাজার থেকে বালুরমাঠ পর্যন্ত মাজার রোড সড়কটি অধিকাংশ স্থানে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কাওলার থেকে নর্দ্দাপাড়া সড়কটি কেটে রেখেছে সিটি করপোরেশন।
দক্ষিণখান আমতলা এলাকার বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ছয় মাস হলো সিটি করপোরেশন রাস্তা কেটে রেখেছে। চলাফেরা করতে খুব কষ্ট হয়। রাস্তা কেটে এমনভাবে রেখেছে হাঁটাচলাও কষ্ট হয়। একজন মানুষ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে সেটা কখনো সম্ভব না। মানুষের এই ভোগান্তি নিয়ে কেউ চিন্তা করে না। আর একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি থাকে। এক সপ্তাহেও পানি সরে না।

এ ছাড়া দক্ষিণখান থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আসেন। এর মধ্যে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, নওয়াব হাবিবুল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়, উত্তরা হাইস্কুল, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর স্কুলে যাতায়াত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রীতিমতো যুদ্ধ করে এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়ক পার হতে হচ্ছে। এই ভোগান্তি প্রতিদিনের। ঢাকা উত্তর সিটির চারটি ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দা দক্ষিণখান এলাকায় থাকেন।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কসাইবাড়ি থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণখানের প্রধান সড়কে নর্দমা নির্মাণের কাজ ৭১ ভাগ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে ৪২ ভাগ। ঢাকা উত্তর সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে চলমান সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে নর্দমা নির্মাণের কাজ শেষ হবে। নভেম্বরের মধ্যে সড়কের সংস্কার কাজও শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পের পরিচালকের এই বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, আসছে বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির মধ্যেই থাকতে হবে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, উন্নয়নকাজের নিয়মই হচ্ছে এলাকাবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রাখা। সড়ক খননের নীতিমালাতেও বলা আছে, এলাকাবাসী অন্তত যেন হাঁটাচলা করতে পারে, সেই জায়গার ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যখন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে, তখন ধরেই নেওয়া হয় মানুষের দুর্ভোগ হবেই। কী করলে জনগণের দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব, সেটি সিটি করপোরেশনসহ কোনো সরকারি সংস্থাই আসলে বিবেচনায় নিতে চায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights