নতুন বছরে মুমিনের কর্মপরিকল্পনা

রেজাউল করিম
বলা হয়ে থাকে- ‘তুমি যখন একটি ভালো মানের পরিকল্পনা করো তখনই তোমার কাজ অর্ধেক হয়ে যায়।’ পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যতে পালনীয় কর্মপন্থার মানসিক প্রতিচ্ছবি, যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা

সঠিক পরিকল্পনা যেমন ব্যক্তির মান উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, অনিশ্চয়তা দূরীকরণ, ভারসাম্য রক্ষা, কাজের গতিশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে, তেমনি ভুল বা ভারসাম্যহীন পরিকল্পনা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বাধার সৃষ্টি করে। এ জন্য সঠিক কর্মকৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

নতুন বছরে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মতো একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা কর্তব্য। আমার দৃষ্টিতে একটি আদর্শ বার্ষিক পরিকল্পনার কিছু নমুনা তুলে ধরলাম-

ইসলামময় জীবন গড়া :

নতুন বছরে মুমিনের প্রধান পরিকল্পনা হওয়া উচিত ইসলামময় জীবন গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার। মানবজাতির সাফল্য লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসকে মেনে নেওয়া।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর তোমরা তাঁর আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, রাসুলের কর্তব্য হচ্ছে শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৫৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করলে আল্লাহরই আনুগত্য করা হয়। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ রাসুলের আনুগত্য করে থাকে, নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই আনুগত্য করে থাকে। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮০)। জীবনের সব ধরনের আমল কোরআন-হাদিস মোতাবেক হতে হবে। এর মধ্যেই মানবতার সার্বিক সফলতা নিহিত আছে।

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন :

কোরআনের তাফসির, হাদিস, ফিকহসহ ইসলামী সাহিত্য এবং অন্য বিখ্যাত সাহিত্যগ্রন্থ অধ্যয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কোরআনকে বোঝার জন্য কোরআনিক ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) কোর্স সরাসরি বা অনলাইনে সম্পন্ন করা যেতে পারে।

ব্যক্তিগত রোজগার বৃদ্ধি :

ব্যবসায়ী হলে আয় বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্ল্যান তৈরি এবং চাকরিজীবী হলে চাকরির পাশাপাশি হালাল পন্থায় অন্য ইনকাম সোর্স তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে আয় অনুযায়ী ব্যয়ের পরিবর্তে ব্যয় অনুযায়ী আয় করার পরিকল্পনা প্রণয়ন।

দান-সদকা :

ব্যক্তিগত ও সংসার খরচের পাশাপাশি দান-সদকার খরচ নির্ধারণ করে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে ইনকামের একটি নির্দিষ্ট অংশ বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে রাখা এবং সারা মাস ওই অ্যামাউন্ট থেকে দান-সদকা করা।

পরিবার :

আদর্শ পরিবার গঠনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ, যেমন- পারিবারিক বৈঠক, প্যারেন্টিং কোর্স, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন।

ভাষাগত দক্ষতা :

ইংরেজিসহ আরো অন্তত দু-একটি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো।

চ্যারিটি :

সামাজিক কল্যাণমূলক চ্যারিটি সংগঠনের সঙ্গে একটি ভালো কাজ করার ব্যবস্থা গ্রহণ।

ভ্রমণ :

জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি মনকে ফ্রেশ ও আল্লাহর সৃষ্টি সৌন্দর্য অবলোকনের উদ্দেশ্যে দেশে কিংবা দেশের বাইরে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাজেট ও সময় নির্ধারণ করা।

শরীরচর্চা :

শারীরিক ফিটনেসের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম এবং ওভারওয়েট হলে ওজন কমানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।

বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান :

কিছু সুনির্দিস্ট বিষয়ের ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা; যেমন- সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানবাধিকার, তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করে তার ওপর পড়ালেখা করে নিজের মতো নোট তৈরি।

টেকনোলজি :

আধুনিক টেকনোলজির অন্যতম প্রধান মাধ্যম কম্পিউটার। তাই কম্পিউটারের কিছু নতুন কাজ শেখা, পাশাপাশি অনলাইনে টেকনোলজির ওপর কিছু কোর্স সম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ।

বন্ধু তৈরি :

বিশ্বব্যাপী ১০-১৫ জন নতুন কল্যাণকামী বন্ধু তৈরির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ।

সমাজ :

দুস্থ মানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করা। এ ক্ষেত্রে শীত, বন্যা, সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কোনো নতুন সমাজকল্যাণ প্রজেক্ট চালু করা অথবা প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রজেক্টে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।

গ্রামের উন্নয়ন :

নিজ গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করার পরিকল্পনা প্রণয়ন। কর্জে হাসানা ফান্ড করে সুদের পরিবর্তে কর্জে হাসানা প্রদান, দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত ফান্ডসহ যুবকদের নিয়ে কল্যাণ সংঘ গঠন করার পরিকল্পনা গ্রহণ।

আল্লাহর সাহায্য ও সম্পর্ক :

একটি সুনির্দিষ্ট কল্যাণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের জন্য মহান রবের কাছে প্রার্থনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল রোজা, নফল নামাজ, বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া করতে হবে।

পরিশেষে, পরিকল্পনা নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি আছে- ‘আপনি যদি পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি ব্যর্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।’ মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights