নদীর চরে হাঁসের খামারে বদলেছে ফারুকের জীবন

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ছোট যমুনা নদীতে নামছে ঝাকে ঝাকে হাঁস। আবার কিছুসময় পর খাবারের পাত্র হাতে যখন আয়, আয়, বলে ডাকছে তখন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ঝাকে ঝাকে পাড়ে ছুটে আসছে ওইসব হাঁস। এই দৃশ্য দেখার জন্য অনেকে আসছে এই নদীর চরে হাঁসের খামার দেখতে।
অন্যদিকে তিনবছরেই ক্যাম্বেল জাতের এই হাঁসের খামারই বদলে দিয়েছে জহুরুল ইসলাম ফারুকের জীবন। অর্থনৈতিক সংকটকে পিছনে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় নদীর চরে এই খামার বাজিমাত করেছে জহুরুল ইসলাম ফারুক।

এখন এই খামার থেকে তিনি হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে আয় করেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। হাঁস দেখাশুনার জন্য ২ জন কর্মচারী আছে যাদের মাসিক বেতন দেয়া হয় ২২ হাজার টাকা। নদীতে থাকা শামুক, মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে এসব হাঁস। এতে হাঁসের ডিমে পুষ্টি গুণাগুণ থাকে ভালো। অন্যদিকে হাঁস পালনে খাবারের খরচ কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন তিনি।

প্রায় তিন বছর আগে নেত্রকোনা থেকে ডিমপাড়া ৭০০ হাঁস কিনে খামার শুরু করেন। শুরুতেই তার আনুষঙ্গিক ব্যয় হয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পরে কিছু হাঁস বিক্রি করেছেন ৬০০ টাকা পিস দরে। আবার গত ফেব্রুয়ারিতে বগুড়ার আবু সাঈদ হাঁসের খামার থেকে ৮৫০টি ১ দিনের বাচ্চা ২৯ টাকা করে কিনে এনেছেন। বর্তমানে তার খামারে ১০০০টি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে। প্রতিদিনের পাওয়া ডিমগুলো ১৬-১৭ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি করেন তিনি।
নদীর পাড়ে সাময়িক শেড করে পালনে তার পাশে অস্থায়ী ঘর করে নিজেই রাতে থাকেন। তবে নদীর পানি বাড়লে বাড়ির পাশে বিলের মাঝখানে স্থায়ী শেড নির্মাণ করেছেন। এখানে ডিম পাড়ে এমন ৮০০ হাঁস রাখা হবে। হাঁসের খামারে সফলতা অর্জনই ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে ফুলবাড়ীর দৌলতপুর ইউপির জানিপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম ফারুকের। খরচ কমাতে বাড়ির পাশে বিরামপুরের পলিপ্রয়াগপুর ইউপির জোতজয়রামপুর এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পারে এই অস্থায়ী শেডে হাঁসের খামার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে খামারি জহুরুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘ক্যাম্বেল’ জাতের একটি হাঁস তিনমাস একাধারে ডিম দিয়ে থাকে। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭-২০ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়,তখন ওগুলো বিক্রি করে দেয়। ডিমগুলো ১৬-১৭ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়। বর্তমানে হাঁসসহ আনুষঙ্গিক খরচ গড়ে প্রতিমাসে ৮০ হাজার টাকা। পাড়ে ৮০-৯০ দিনের জন্য সাময়িক শেড করায় নদীতে থাকা শামুক, মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ায় খাবার খরচ কম লাগে। হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে প্রতিমাসে খরচ বাদ দিয়ে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। নদীতে সারাদিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন তার সম্পর্কে ভাগ্নে ছায়রুদ্দিন। হাঁস শেডে পৌঁছানোর পর পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে জোবায়ের ও ছায়রুদ্দিনের। আর হাঁসের ওষুধ খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখি আমি নিজে। এটাই নিত্যদিনের কাজ। আর একাজে পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করেছে তার স্ত্রী মোছাঃ জেবা বেগম।

তিনি বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না, ধৈর্য্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এই খামার। স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খাল-বিলের পাশে খামার গড়ে তোলা উচিত। অনেকে হাঁসের রোগ বালাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

বিরামপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিরামপুর উপজেলায় দিন দিন খামারী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এ পর্যন্ত ৩৪টি খামার রয়েছে বলে। নদী, খাল-বিলে ভরা এ উপজেলায় হাঁস পালন ব্যাপক সম্ভাবনাময়। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights