নাশকতাকারীরা গ্রেফতার হয়নি

সাখাওয়াত কাওসার
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় কোনো নাশকতাকারী গ্রেফতার হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এখনো জানতে পারেননি কে বা কারা আগুন দিয়েছিল। অন্যদিকে, চার দিন ধরে মর্গে পড়ে আছে নিহত চারজনের লাশ। স্বজনদের নমুনা নিয়ে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে সিআইডি। গোপীবাগের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধরা অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। এদিকে কাল থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন আবার চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় পরিকল্পনাকারীসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে ট্রেনটিতে কে বা কারা আগুন দেয় সে তথ্য এখনো তারা জানতে পারেননি।

গোপীবাগে ট্রেনে আগুনের ঘটনার পর নিখোঁজ হওয়া আবু তালহার বাবা আবদুল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চার দিন ধরে ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি। ছেলের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে। কখনো ডিবি অফিসে। কখনো রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করছি। তারা কোনো খোঁজ দিতে পারছেন না। সিআইডি আমার ডিএনএ নমুনা নিয়েছে। তারা অন্তত সাত দিন অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন। এরপর জানতে পারব ছেলে বেঁচে আছে, না মারা গেছে।
জানা গেছে, একইভাবে আরও তিনটি লাশের দাবিদার পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। তারা আবদুল হকের মতো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনের লাশ বুঝে নেওয়ার জন্য। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, নিহত চারজনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত রবিবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন। লাশ দাবিদারদের ডিএনএ নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রেনে শিকল টানলেও তা কাজ করেনি : মামলার বাদী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) এস এম নূরুল ইসলাম (৫৭) এজাহারে উল্লেখ করেন, ৫ জানুয়ারি দুপুর ১টার সময় ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে। রাত আনুমানিক ৯টার সময় ট্রেনটি সায়েদাবাদ এলাকায় পৌঁছানো মাত্র ট্রেনের ৭৯৩৭ নম্বর কোচের বগি ‘চ’তে ধোঁয়া দেখে চিৎকার শুরু করেন যাত্রীরা। তখন ওই বগিতে দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী আগুন আগুন বলে চিৎকার করে যাত্রীদের সতর্ক হতে বলেন এবং ট্রেনের শিকল টেনে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় আমি (বাদী) ভ্যাকুয়াম প্রেস করে ট্রেনটি থামাই। রাত আনুমানিক ৯টা ২ মিনিটের দিকে গোপীবাগ ও গোলাপবাগের মাঝামাঝি জামে মসজিদের সামনে ট্রেনটি থামে। ততক্ষণে আগুন দাউ দাউ করে ‘চ’ বগি থেকে ‘ছ’ বগিতে এবং ‘পাওয়ার কার নম্বর ৭৫২৬ ‘ভ’ বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে ট্রেনে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি এবং জরুরিভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পাঠানোর অনুরোধ করি।

কাল থেকে চলবে বেনাপোল এক্সপ্রেস : অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বন্ধ রয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ঘটনার দিন গত শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে বেনাপোল যাওয়ার শিডিউল বাতিল করা হয়। তবে কাল থেকে ট্রেনটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। পরে ওই দিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে আবার বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ট্রেনটি সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার কথা থাকলেও সেদিন ট্রেনটি চালু করা হবে। রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে নারীসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আগুনে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়। এ সময় ট্রেনের শিকল টানলে তাতে কাজ করেনি। বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে হতাহত ছাড়াও রেলওয়ের আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পরদিন বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) এস এম নূরুল ইসলাম (৫৭) বাদী হয়ে মামলা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights