নিত্যপণ্যের লাগাম ছাড়া মূল্য, সিন্ডিকেটের যাতাকলে পিষ্ট রংপুরের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

বর্তমানে আলু, পিয়াজ, ডিম, ভোজ্যতেল, চাল-আটা, গ্যাস, শাক-সবজিসহ প্রতিটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির এই প্রতিযোগিতায় সবখানে ব্যবহার হচ্ছে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ ‘সিন্ডিকেট’। অবৈধ সুযোগ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেটের জুড়ি নেই। চেষ্টা করেও এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়।

সরকার আলু, ডিম ও পিয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই দামে কোথাও ওই তিনটি পণ্য পাওয়া যবে কী না এ নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন ভোক্তারা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মূল্য বৃদ্ধির যাতাকলে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হচ্ছেন অবহেলিত বলে খ্যাত রংপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে শুক্রবার সকালে রংপুর সফরে এসে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রংপুরসহ বিভিন্নস্থানে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ৫৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে চাল। সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না অনেক ব্যবসায়ী। যথেষ্ট চাল আছে কিন্তু চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তা মজুদ করে রেখেছে। ফলে চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে। চালের বাজারে এই অস্থিরতার পেছনে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিলারদের হাত রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বড় বড় অটো রাইস মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজার থেকে হাজার হাজার টন ধান চাল ক্রয় করে মজুদ রেখে নিজেদের ইচ্ছেমত মূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে বাজারে চালের দাম কমছে না।
শাক সবজির কৃষক পর্যায়, খুচরা বাজার ও পাইকারি বাজারের বিস্তর ফাঁরাকেও রয়েছে সিন্ডিকেট। বাজারে আলুর দাম প্রতিকেজি ৫০ টাকার ওপরে। হিমাগারের রাখা আলু একটি সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছে মত উত্তোলন করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে হিমাগার মালিকরা বলছেন সিনিডকেটের সাথে তারা জড়িত নয়। ডিমের বাজারও সিন্ডিকেটের কব্জায়। স্থানীয় ব্যাসায়ী ও খামারীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ডিমের মূল্য নির্ধারণ হয় ঢাকা থেকে। সেখান থেকে যে দর বেধে দেয় এর বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।

নিত্যপণ্যের পাশাপাশি আরও অনেক সিন্ডিকেট রয়েছে। যেমন, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সীমান্ত গলিয়ে জলের স্রোতের মত ফেন্সিডিল নিয়ে আসছে দেশে।

বিদেশগামী হাজার হাজার যুবক দালালসিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হতে হলে প্রযোজন সিন্ডিকেটের। জাল টাকার সিন্ডিকেটের কারণে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ সবসময় থাকেন আতংকে। টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে সিন্ডিকেট রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করে না। নারী শিশু পাচারকারি সিন্ডিকেট,ঈদের সময় গ্রামের বাড়ি যাবেন সেখানেও রয়েছে বাস ,লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করার শক্তিশালি সিন্ডিকেট। দেশের জনগণকে রাস্তায় বের হলেই কোন না কোন সিন্ডিকেট পাল্লায় পরতে হয়। এই সিন্ডিকেটের লাগাম ধরা যাচ্ছে না।

এই সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে শুক্রবার দুপুরে রংপুরের পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংবাদিকদের বলেছেন, সিন্ডিকেট সরকারকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। যেখানে সরকারের ইন্টারফেয়ার করার কথা, সরকারের কিছু দায়িত্ব থাকে। সেসব জায়গায় তারা সঠিকভাবে কিছু করছে, এ ধরণের কোন প্রমাণ আমরা পাই না। সেই কারণে দ্রব্যমূল্য সরকার যাই বেঁধে দিয়ে থাকুক, বাজারে এর চেয়ে মূল্য বেশি। কৃষকরা অনেক সময় কম দামে দিচ্ছে, শহরে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সেটা করা হচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো রকম কোনো বন্দোবস্ত বা পদক্ষেপ জনগণের চোখে পড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। এটা একটা দুর্বিসহ অবস্থা।

রংপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কাজী মো. জুননুনসহ অনেকেই বলেন, দেশে সিন্ডিকেট ও মজুদদারি প্রতিরোধে আইন হয়েছে। এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ করে সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের দৌরাত্ম্য রোধ করা হলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights