নির্মল জ্বালানির উৎস হতে পারে প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন

অনলাইন ডেস্ক

পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সন্ধানে হাইড্রোজেন অন্যতম সম্ভাবনাময় উৎস। কিন্তু সেই জ্বালানি উৎপাদনের ঝক্কি কম নয়। এবার মাটির নীচে প্রাকৃতিক হাইড্রোজেনের ভাণ্ডার কাজে লাগানোর উদ্যোগ শুরু হচ্ছে।

পৃথিবীর গভীরে প্রচুর হাইড্রোজেন জমা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মাটির নীচে এমন ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে বলে অনুমান করা হয়। প্রাকৃতিক হাইড্রোজেনের এই ভাণ্ডার কি আমাদের চাহিদা মেটাতে টেকসই এক স্বর্ণখনির মতো হয়ে উঠতে পারে?

যান চালাতে পেট্রোল ও ডিজেলের বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যায়। ইস্পাত ও রসায়ন শিল্পখাতকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতেও সেই সম্পদ কাজে লাগানো যায়। কারণ কম্বাসচন প্রক্রিয়ার পর সেক্ষেত্রে শুধু পানি অবশিষ্ট থাকে।
প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন আমাদের গ্রহের কার্বন নির্গমন নাটকীয় মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারে। তা সত্ত্বেও এই উৎস কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না? ভূতত্ত্ববিদ ও স্টার্টআপ উদ্যোগপতি এরিক গোশের মনে করেন, ‘‘পৃথিবীতে এখনও ভালোভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। মাটির গভীরে এখনও অনেক কিছু অজানা থেকে গেছে। মানুষ নিজেকে সবজান্তা মনে করলেও বাস্তবে সেটি ঠিক নয়। গ্রহের একটা বড় অংশে কোনও অন্বেষণ হয়নি।

এরিক গোশের বহু বছর ধরে হাইড্রোজেনের প্রাকৃতিক উৎসের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমে পিরেনিস পর্বতমালায় এমন এক উৎস রয়েছে বলে তার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘‘হাইড্রোজেনের অস্তিত্বের কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে, কারণ ভূপৃষ্ঠে তার কিছুটা বেরিয়ে আসছে। এমন ‘সিপেজ’ বড় ফাটল বা টেকটনিক ফল্টের মধ্যে দেখা যায়। অর্থাৎ, একটি এলাকার গভীরে সীমাবদ্ধ৷ আমরা সেই এলাকাকে ‘কিচেন’ বলি।”

মাটির গভীরে সেই ‘কিচেন’-এ হাইড্রোজেন সৃষ্টি হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে কিচেনের লৌহঘটিত শিলার সংস্পর্শে আসে। তখন হাইড্রোজেন বেরিয়ে এসে সেখানে জমা হয়।

এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি এমন হাইড্রোজেনের উৎস কাজে লাগানো হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার এক গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে একটি জেনারটর হাইড্রোজেন শক্তিতে চলছে।

লাইবনিৎস ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. রুডলফো ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, ‘‘মালিতে মাটির অগভীরে বিশাল পরিমাণে হাই কনসেন্ট্রেশন হাইড্রোজেন পাওয়া গেছে৷ প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিটার নীচেই সেই ভাণ্ডার রয়েছে। অন্যান্য দেশেও সেই প্রক্রিয়া নকল করে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে ইলেকট্রিক গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই আমাদের উদ্দেশ্য।”

‘ফেয়ারি সার্কেল’ বলে পরিচিত এমন রিং হাইড্রোজেন ভাণ্ডারের ইঙ্গিত দেয়। ড. ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, ‘‘হাইড্রোজেন বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে এমন কাঠামো সৃষ্টি করে। স্যাটেলাইট ইমেজের সাহায্যে আমরা এমন কাঠামো চিহ্নিত করতে পারি। জানতে পারি, মাটির নীচে ঠিক কোথায় হাইড্রোজেন সৃষ্টি হচ্ছে বা অতীতে ঘটেছে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্টার্টআপ কোম্পানি হাইড্রোজেনের সন্ধানে ড্রিলিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ মোটা মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা সেই কাজে কোটি কোটি ডলার ঢালছেন। স্টার্টআপ উদ্যোগপতি ভিয়াচেস্লাভ জগোনিক বলেন, ‘‘মাটির নীচ থেকে হাইড্রোজেন যে উত্তোলন করা যায়, সেটা হাতেনাতে দেখানোই ছিল ড্রিলিং-এর মূল কারণ। কারণ অনেক বিনিয়োগকারী ও অন্যান্যরা আমাকে বলেছেন, যে এত সহজে এমন সাফল্য তাদের অভাবনীয় মনে হচ্ছে। সেটা যে আদৌ সম্ভব, তা সবার আগে দেখিয়ে দিতে বলেছেন তারা।”

কেউ বিশাল ভাণ্ডার আবিষ্কার করে মোটা অংকের অর্থ লাভ করতে পারেন৷ বিষয়টা অনেকটা পেট্রোলিয়াম যুগের সূচনার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু এর আগে কেউ কখনো সেই চেষ্টা না করায় হাইড্রোজেনের জন্য ড্রিলিং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights