নেত্রকোনায় হিমু উৎসব
আলপনা বেগম, নেত্রকোনা:
প্রতি বছরের ন্যায় আসছে ১৩ নভেম্বর এবারো হিমু উৎসবে মেতেছে নেত্রকোনার তরুণ তরুণীরা। লেখকের নিজ জেলার একদল হুমায়ূন ভক্তরা মিলে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট করতেই লেখকের ‘কালজয়ী’ একটি চরিত্রকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তারুণ্য নির্ভর এই “হিমু পাঠক আড্ডা” নামের সংগঠনের মাধ্যমে গত প্রায় ৮ বছর ধরে লেখকের জন্মদিন ও মৃত্যু দিবস পালন করে আসছে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে।
এর মধ্য দিয়েই নেত্রকোনার আপামর মানুষের কাছে দেশ বরেণ্য লেখকের উপন্যাস, নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত সমাজ পরিবর্তনের নানা বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। দিনে দিনে লেখক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হচ্ছে জেলার তরুণ যুবারা। যে কারণে বছরজুরে অধির আগ্রহ নিয়ে জন্মদিন উপলক্ষে পক্ষকাল ধরে হিমু উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতিও চলে ঘটা করে।
ওই দিনে হিমু রূপা সেজে পুরো শহর জুরে আনন্দ শোভাযাত্রার আকর্ষণ থাকে হলুদ রঙের টি শার্ট। এতে লেখকের একটি করে উক্তি লিখা থাকে। প্রতি বছর নতুন নতুন উক্তি খুঁজতে গিয়েই লেখকের সকল উক্তি পড়তে হয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের হিমু রূাপাদের। গানে ও আড্ডায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য লেখকের নাটক সিনেমার গান বাছাই করে চলে রিহার্সাল।
দিনটিকে ঘিরে আনন্দে শুধু তরুণরাই থাকেন না। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিকসহ সুধী মহলের নানা বয়সের নারী পুরুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় দিনটি। বছর দুয়েক পরপর এলাকার গুণীজনদের মধ্য থেকে একজন করে মনোনীত করে দেয়া হয় সন্মাননা।
এসকল অনুষ্ঠানে থাকেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবীসহ জেলার উর্ধতন কর্মকর্তারা। তাদেরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আয়োজনটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়। যাতে একজন হুমায়ূন আহমেদকে নিজ জেলার সর্বস্তরের মানুষ ঘটা করে স্মরণ করে।
২০১৫ সনে দেশ বরেণ্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক যতীন সরকার উদ্ধোধন করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল হিমু উৎসবের। যা বিগত সময়ে করোনাকালেও আটকাতে পারেনি। শারীরিক অসুস্থতায় অধ্যাপক যতীন সরকার ভার্চুয়ালি দিবসের উদ্বোধন ঘোষাণা করেন। এই হিমু উৎসব নিয়ে নিয়মিত শুরু হয়েছিল পাঠচক্র নামে সাহিত্য আড্ডা।
অধ্যাপক যতীন সরকারের ভাবনা
হিমু পাঠক আড্ডার উপদেষ্টা অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, নেত্রকোনার বেশ কিছু ছেলে মেয়ে মিলে হিমু পাঠক আড্ডা তৈরী করেছে। প্রত্যেকবছর হুমায়ূন আহমেদে এর জন্মদিন তারা উদযাপন করে এবং আমি জন্মদিন উদ্বোধন করার জন্য আগে যেতাম এখন যেতে পারি না। হুমায়ূন আহমেদ একজন কথাশিল্পী ছিলেন। এইটাই তার একমাত্র বড় পরিচয় না। সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো হুমায়ূন আহমেদ পাঠক সৃষ্টি করে গেছেন। মাসে দুইটা বই পড়তে পারে এমন কোন লেখক আমাদের দেশে ছিলেন না। এ ব্যাপারে অনেক সময় পশ্চিমবাংলার উপর নির্ভর করতে হতো। সেটা থেকে আমাদের পাঠকদেরকে তিনি লিখা দিয়েছেন। আমাদের দেশের চিন্তা চেতনা আমাদের দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা উৎকন্ঠা প্রীতি এই সমস্থ জিনিস নিয়ে যারা প্রচুর লিখেছেন। তাদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের সমকক্ষ আর কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। কাজেই হুমায়ূন আহমেদ পাঠক সৃষ্টি করেছেন। এই পাঠকদের মধ্যে হিমু পাঠক আড্ডা প্রতিবছর হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে। এই স্মরণের মধ্য দিয়ে তারা আমাকেও সম্পৃক্ত করে সেজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
জন্ম মৃত্যু
দেশ বরেণ্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ মায়ের বড় সন্তান হিসেবে নানার বাড়ি জেলার মোহনগঞ্জের পৌর এলাকার শেখ বাড়িতে ১৯৪৮ সনের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেছেন। তিনি ২০১২ সনের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমেরিকায়।
লেখক পৈত্রিক ভিটা কেন্দুয়ায় ২০০৬ সনে স্থাপন করে গেছেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান।