পরিবার বিচ্ছিন্ন বাবা-মায়ের ঠিকানা ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম’
নীলফামারী প্রতিনিধি
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লীতে গড়ে ওঠা ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে’ বসবাস করছেন অসহায় মা-বাবারা। তাদের সবার জীবনের গল্পটাও অনেকটা একই। কেউ স্বামী হারা, কেউ সন্তান হারা হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। চোখে-মুখে যাদের বয়সের ভাঁজ, এক অদৃশ্য বেড়াজালে বন্দী তারা। এখন শুধু পরপারের হাতছানির অপেক্ষা। অথচ এই বাবা-মা একসময় তাদের সন্তানদের মানুষ করতে কতই না ছোটাছুটি করেছেন। তারাই আজ সন্তানের কাছে ঝরে পড়া শুকনো পাতার মতো।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সরকারী কলেজ সংলগ্নে সাজেদুর রহমান সাজু নামের এক ব্যক্তি ২০১৮ সালের গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম’। প্রথমে একজনকে দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় ৩৭ জনের ঠাঁই হয় এখানে। এখানে যারা নিবাসী হয়েছেন তারা সবাই অতিদরিদ্র সহায় সম্বলহীন এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ছেলে বা সন্তানরাও খোঁজ রাখেন না তাদের।
বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম দুলাল বলেন, ছেলে-মেয়েরা দেশের বাইরে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু তারা কোনো খবর নেয় না। এখানে আছি ভালো আছি।
রহিমা বেগম নামে বৃদ্ধাশ্রমের এক বাসিন্দা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে, একটা ছেলে ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় সেও মারা গেছে। তারপর এখানে এসেছি।
মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি এখানে দীর্ঘ ৯মাস থেকে আছি। বৃদ্ধাশ্রমে যারা রয়েছেন তাদের দেখাশুনা এবং রান্নার কাজ করি। এখানে সবাই আমাকে ভালোবাসে।
নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার সেই বিখ্যাত গান ‘বৃদ্ধাশ্রম’ এ অনুপ্রাণিত হই। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সাল থেকে শুরু করি। এখানে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অনেক অসহায় বাবা-মা রয়েছে। আমার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাদের নিজ সন্তানের কাছে ফেরত দেওয়া। সবার সহযোগীতায় এখানে থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়। সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ এই বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন করে সহায়তা করার জন্য।