পাবনায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধের অভিযান আটকে দিলেন ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা
পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযানিক দলকে সড়কে আটকে দিলেন ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার সাদিপুর ইউনিয়নের ভোমড়ার মোড় এলাকায় প্রায় দেড় হাজার জনতা সড়ক অবরোধ করে অভিযানিক দলের গাড়ি আটকে দেন।
এ সময় তাদের বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাবনার অভিযানিক দলটি। এরপর কুষ্টিয়ার আরও দুটি অভিযানিক দল আসলে তারাও পিছু হটতে বাধ্য হন।
এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন পাবনা সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল ইসলাম ও কুমারখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাতের নেতৃত্বাধীন দুটি অভিযানিক দল উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানিক দলের দেওয়া তথ্যমতে, পাবনায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসক কোনো দপ্তরেরই অনুমোদন নেই, এসব ইটভাটার। কোনো কোনোটায় শর্তের বাইরে গাছ পুড়ানো হয় এবং নিষিদ্ধ চিমনি ব্যবহার করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে ও নিয়মের আওতায় আনতে বুধবার উপজেলার হেমায়েতপুর এলাকার ইটভাটাগুলোতে অভিযানে বের হয় পাবনা ও কুষ্টিয়ার যৌথ অভিযানিক তিনটি দল।
এ সময় দলগুলো কুষ্টিয়ার সাদীপুর ইউনিয়নের ভোমড়ার মোড় এলাকায় পৌঁছালে ভাটার মালিকপক্ষ হাজারের অধিক শ্রমিক নিয়ে সড়ক আটকে দেয়। এসময় ইটভাটা বন্ধ করে গরিবের পেটে লাথি না মারতে বিভিন্ন স্লোগান দেন অবরোধকারীরা। একপর্যায়ে অভিযানিক দলটি পিছু হটতে বাধ্য হয়।
অবরোধকারীদের পক্ষ থেকে সাদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম বলেন, হাজার হাজার শ্রমিক এখানকার ইটভাটাগুলোতে কাজ করে সংসার চালায়। তারা ইতিমধ্যে ভাটা মালিকের থেকে মোটা অংকের দাদন (অগ্রিম টাকা) নিয়েছে। এখন ভাটা বন্ধ হলে তারা কি করে খাবে, কীভাবে দাদন (অগ্রিম টাকা) পরিশোধ করবে? যদি বন্ধ করতেই হয় তবে ইটভাটা শুরুর আগেই মাইকে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করতো। তাহলে শ্রমিকরা এতো এতো টাকা অগ্রিম নিতো না। এখন এগুলো (ইটভাটা) বন্ধ করা অন্যায়।
শ্রমিকদের পক্ষে সাদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের আবেদন লেবারদের স্বার্থ চিন্তা করে এ বছরের মতো ইটভাটাগুলো চলতে দিক। কারণ ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে, লেবাররা অগ্রিম টাকা নিয়েছে। এখন ইটভাটা বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে লেবাররা। আপনারা শুনলেন লেবাররা বলতেছে ভাটা বন্ধ হলে না খেয়ে মরবে তারা। এখন হুট করে তারা কোন কাজে যাবে। অল্প কিছু লোক না, হাজার হাজার মানুষ। খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকেও এসেছে। এসব কিছু বিবেচনায় এ বছরের মতো ইটভাটা চলতে দেওয়া হোক। আগামী বছর না চলতে দিলে আগে জানিয়ে দেবে, লেবাররা ভিন্ন পেশা খুঁজে নেবে।
এ ব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন জানান, হেমায়েতপুরের এই এলাকায় অভিযানে আসলে আমাদের বিভ্রান্ত করে। পাবনার অভিযানিক দল গেলে বলে এই ইটভাটা কুষ্টিয়ার মধ্যে, আবার কুষ্টিয়ার টিম গেলে বলে পাবনার মধ্যে। এজন্য এবার আমরা কুষ্টিয়া ও পাবনার তিনটি টিম যৌথ অভিযানে এসেছিলাম। কিন্তু আমরা ভোমড়ার মোড় এলাকায় আসলে ইটভাটা মালিকরা শ্রমিকদের ব্যবহার করে আমাদের আটকে দেন। একপর্যায়ে কয়েক হাজার নারী, শিশু ও পরুষ গাড়ির সামনে বসে রাস্তা প্রতিরোধ করলে সামনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাবনা সদর উপজেলায় ৫২টিসহ জেলায় মোট ১৭৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টি বৈধ। এর বাইরে সবগুলো অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।