পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জঞ্জাল

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা। পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা কচুরিপানার জঞ্জালে হুমকিতে পরেছে মৎস্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, লঞ্চ ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয়রা বলছে, এসব কচুরিপানা দ্রুত অপসারণে ব্যবস্থা করা নাহলে, এর রূপ হতে পারে আরও ভয়াবহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি টানা বর্ষণের পর সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে কচুরিপানা। সীমান্ত থেকে নেমে আসা কচুরিপানার জঞ্জাল জমতে জমতে এখন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এসব কচুরিপানার জঞ্জালে আটকা পড়ছে নৌযান। ভোগান্তি বেড়েছে রাঙামাটি বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপকুলবাসির। কচুরিপানার কারণে নৌযানে হুমকির পাশাপাশি থমকে দাঁড়িয়েছে নৌপথে ৬টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, জেলেদের জালও আটকা পরছে কচুরিপানার জঞ্জালে। ব্যাহত হচ্ছে মৎস্য উৎপাদন।

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য শিকারি শংকর দাস বলেন, জাল ফেললে মাছ নয় আটকা পরে কচুরিপানা। কচুরিপানার জঞ্জালে ছিড়ে গেছে অনেক জাল। কাপ্তাই হ্রদে এ মৌসুমে ব্যাপক মৎস্য আহরণের কথা থাকলেও এখন সেভাবে জেলা ফেলতে পারছেনা জেলেরা। শুধুমাত্র কচুরিপানার কারণে।
এইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিলাইছড়ি উপজেলার চাষী মিনতি চাকমা। তিনি বলেন, কচুরিপানার কারণে নৌপাথে মারাত্মক ভোগান্তি বেড়েছে। ঠিকমত বাজারে আসতে পারি না। এসব কচুরিপানার জন্য। বিলাইছড়ি থেকে রাঙামাটি তবলছড়ি বাজারে আসতে ঘণ্টা ব্যয় হয় শুধু নদীপথে। বোট আটকে যায় কচুরিপানার জঞ্জালে। তাই হাট বারে সঠিক সময় কৃষিপণ্য বাজারজাত করা যায় না।

অন্যদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ৬টি উপজেলার সাথে নৌপথে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের বুক জুড়ে ভেসে বেড়ানো কচুরিপানার জঞ্জালে আটকা পরছে লঞ্চ ও ছোট নৌযান। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অপসারণ করা না হলে এ সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করবে বলছেন রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দীন সেলিম। তিনি বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে আসবে পর্যটক। তাদের জন্য নৌপথে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এ কচুরিপানা। বিগত সময়ও পর্যটকদের নৌযান কচুরিপানায় আটকা পরে নানা সমস্যায় পরেছিল। এছাড়া উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখত হলে কচুরিপানা অপসরাণ খুবই জরুরি।

তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পেলে কচুরিপানার অপসারণের স্থায়ী সমাধান আসবে না বলেন কাপ্তাই ৪নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো.আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, উপজেলাবাসীর জন্য মহা বিপদ হচ্ছে কচুরিপানা। কচুরিপানা অপসারণ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন ভেসে আসছে এসব কচুরিপানার জঞ্জাল। ঘাট ব্লক করে রেখেছে কচুরিপানা। নৌকা ঘাটে আসতে পারছে না। জরুরি রোগী আসতে হলেও অনেক কষ্ট হচ্ছে নৌপথে। এ কচুরিপানার জন্য একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অপসারণের বিষয়ে উপজেলার স্ব স্ব চেয়ারম্যানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান।

রাঙামাটি শহরের সাথে নৌ পথে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে এসব কচুরিপানা অপসারণ এখন সময়ের দাবি বলছেন ভূক্তভোগিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights