প্রাণিজগৎ যেভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে

আতাউর রহমান খসরু
মহান আল্লাহর সৃষ্টিজগতের বিস্তৃত অংশজুড়ে আছে জীব বা প্রাণিজগৎ। বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগৎ আল্লাহর সৃষ্টি ও কুদরতের বিস্ময়। মহান আল্লাহ বিশাল প্রাণিজগৎকে মানুষের সেবা ও কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন। মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণিজগৎ সম্পর্কে অবগত হচ্ছে এবং তাদের বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্য। তোমাদের সৃজনে এবং জীবজন্তুর বিস্তারে নিদর্শন রয়েছে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য ।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ৩-৪)
প্রাণিজগতের অনেক কিছুই অজানা

প্রাণিজগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু তারা এর সবটুকু জানতে পারেনি এবং মানবজাতির পক্ষে তার পুরোটা জানা সম্ভবও নয়।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮)
বিপুল বৈচিত্র্য

আল্লাহ প্রাণিজগতে বিপুল বৈচিত্র্য রেখেছেন। প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য সম্ভবত মানুষের কল্পনার অতীত। যেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সব জীব সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে।

আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪৫)
শ্রেণিবদ্ধ ও সুসংহত

সৃষ্টিজগতের সুবিশাল প্রাণিজগৎকে আল্লাহ বিচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টি করেননি, বরং শ্রেণিবদ্ধ ও সুসংহতভাবে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন জীব নেই অথবা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোনো পাখি ওড়ে না, কিন্তু তারা তোমাদের মতো এক একটি উম্মত (শ্রেণি বা গোষ্ঠীভুক্ত)।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)

সুশৃঙ্খলিত প্রাণিজগৎ

আল্লাহ প্রাণিজগৎকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছেন।

আর তারা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম মেনে চলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর; এমন কোনো জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আছেন সরল পথে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৫৬)
আকার-অবয়বে আল্লাহর কুদরত

প্রাণিজগতে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেহ ও অবয়বের অধিকারী প্রাণী দেখা যায়। তাদের সদৃশ ও বৈসদৃশ আকার ও অবয়ব মহান আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতারই সাক্ষ্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৫০)

প্রাণিজগতে জীবিকার সুষম বণ্টন

মহান আল্লাহ সুবিশাল প্রাণিজগতে সুষম জীবিকার বণ্টন করেছেন। তিনি সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যচক্রের মাধ্যমে সবার জীবিকা নিশ্চিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছুই আছে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)

প্রাণিজগতে আল্লাহর আনুগত্য

সৃষ্টিজগতের সব কিছুর মতো প্রাণীরাও আল্লাহর অনুগত। তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে আল্লাহর আনুগত্য করে এবং তাঁর ইবাদতে রত থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখ না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড্ডীয়মান বিহঙ্গকুল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তাঁর ইবাদতের ও পবিত্র ঘোষণার পদ্ধতি। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪১)

মানুষের সেবায় নিয়োজিত

আল্লাহ সৃষ্টিজগতের অন্য সব কিছুর মতো প্রাণিজগৎকেও মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। তারা মানুষের দৃশ্যমান হোক বা অদৃশ্য, মানুষ তাদের সম্পর্কে অবগত থাকুক অথবা না থাকুক, সবাই নানাভাবে মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ১৩)

বহুমুখী কল্যাণের ধারক

আল্লাহ প্রাণিজগৎকে বহুমুখী কল্যাণের ধারক বানিয়েছেন। যেমন :

১. বাহন : পৃথিবীতে প্রাণী হিসেবে বাহন সর্বপ্রাচীন। এখনো পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাণীকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ছাড়া তোমরা পৌঁছাতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক আবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।’
(সুরা : নাহল, আয়াত : ৭)

২. খাদ্য ও পানীয়ের উৎস : প্রাণিজগৎ মানবজাতির খাবার ও পানীয় জোগান দিয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমি এগুলোকে তাদের বশীভূত করে দিয়েছি। এগুলোর কতক তাদের বাহন এবং তাদের কতক তারা আহার করে। তাদের জন্য এগুলোতে আছে বহু উপকারিতা আর আছে পানীয় বস্তু। তবু কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৭২-৭৩)

৩. পোশাকের উৎস : প্রাণী থেকে মানুষ পোশাক তৈরির উপাদান সংগ্রহ করে। যেমন পশম, চামড়া, রেশমগুটি ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার আছে। এবং তা থেকে তোমরা আহার করে থাকো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫)

৪. মানসিক প্রশান্তি লাভ : পশুপাখি মানুষের চোখ শীতল করে এবং মনে প্রশান্তি আনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা যখন গোধূলিলগ্নে তাদেরকে চারণভূমি থেকে ঘরে নিয়ে আসো এবং সকালে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তাঁর সৌন্দর্য উপভোগ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬)

৫. শোভা ও সম্পদ : প্রাণীগুলো, বিশেষ করে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু মানুষের জন্য শোভা ও সম্পদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮)

প্রাণিজগৎ নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

আল্লাহ সুবিশাল প্রাণিজগৎ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি তারা দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কিভাবে তাকে ‍সৃষ্টি করা হয়েছে?’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ১৭)

আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights