ফের ভয়াবহ অস্থির ডলারের বাজার

আলী রিয়াজ
নানা উদ্যোগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পরেও ডলারের বাজার স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। বছরজুড়ে ডলার নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের। বছরের শেষে এসে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের দর। খোলাবাজারে কোথাও কোথাও ১২৯ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছে মার্কিন ডলারের। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে ব্যাংকগুলো ১২০ টাকা ঘোষিত দরের চেয়ে কমপক্ষে ৮ টাকা বেশি দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে; যার নেতিবাচক প্রভাবে খোলাবাজারে দর আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাস কেন্দ্র করে হঠাৎ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসির পরিমাণ বেড়েছে। এজন্য বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। রপ্তানি আয়ে কোনো সুখবর না থাকায় শুধু রেমিট্যান্স-নির্ভরতা দিয়ে ডলারের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ডলারের দর হঠাৎ বেড়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোয় ডলারের সর্বোচ্চ বেঁধে দেওয়া দর ছিল ১২০ টাকা। গত সপ্তাহেও এ নির্দেশনা বহাল ছিল। এটি গত জুনে ছিল ১১৮ এবং গত বছরের ডিসেম্বরে ১১০ টাকা। সে হিসেবে এক বছরে ডলারের ঘোষিত দর বেড়েছে ১০ টাকা। বাস্তবে এ সময় ডলারের দর বেড়েছে ১৮ টাকার বেশি। তবে গত সপ্তাহ ধরে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারে দর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার আগের নির্দেশনা থেকে সরে এসে ১২৩ টাকার বেশি দরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় না কেনার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থাৎ ১২০ টাকার স্থলে ১২৩ টাকা করে আন্তব্যাংক ডলার দর নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকদিনের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সপ্তাহের শুরুতে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায়। আন্তব্যাংক লেনদেন ছিল ১২০ টাকা। সপ্তাহের শেষে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা হয়েছে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকায়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে হঠাৎ বড় উল্লম্ফন দিয়ে ১২৮ টাকার বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায় ডলার কিনছে। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ফলে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকার নিচে কোথাও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, দিলকুশা ও ফকিরাপুলের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় বেঁধে দেওয়া দামে ডলার বেচাকেনা করতে দেখা যায়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানিয়েছেন, ১২৮ থেকে ১২৯ টাকায় ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। এতে আমদানির পরিমাণ কমে গেলেও দেশের রপ্তানিতেও তেমন প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি। ফলে পুরো ডলার রিজার্ভ রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এ সময় দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে ২ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এর ফলে মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ রিজার্ভ বাড়লেও মূলত রপ্তানি করে ডলার সংগ্রহের তেমন ভূমিকা নেই। ফলে বাজারে ডলারের সামান্য চাহিদা বাড়লেই ভয়াবহ অস্থির হয়ে ওঠে।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন কিছুটা বেশি চাহিদার কারণে হয়তো ডলারের দর বাড়তি। তবে ডলার সংকটে ব্যাংকগুলোয় যে অস্থিরতা ছিল তা নেই। বেশির ভাগ ব্যাংকে এখন ডলার পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির পরিবর্তে কিনছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকায় ডলারের সংকট এখন নেই। ব্যাংকগুলো এলসির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ করছে না। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। খোলাবাজারে দর বেশি থাকলে দ্রুত সেটাও কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights