বগুড়ায় ৩০ হাজার লিটার মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বগুড়ায় চলতি বছর বেড়েছে সরিষা চাষের জমি। আর বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন সবুজ চাদরের মাঝে ফুটে আছে শত শত কোটি হলুদ ফুল। আর ফুলের ভ্রমর মৌমাছি এসে গুণ গুণ করে গাইতে শুরু করেছে। হলুদ ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। জেলার বিভিন্ন জমির পাশে হাজার হাজার মৌমাছির বাক্স ফেলে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে চলতি মৌসুমে সরিষার ক্ষেত থেকে বগুড়ায় প্রায় ৩০ হাজার লিটার মধু সংগ্রহ হবে।

জানা যায়, কম খরচ, কম পরিশ্রম আর অল্প সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে সরিষা লাভজনক ফসল। ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ করে প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড় ৭ থেকে ৮ মণ হারে সরিষার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বগুড়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সরিষার। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। এরমধ্যে কাহালু ও নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুরে বেশি সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলাতেও সরিষা চাষ করেছেন কৃষকেরা।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও শেরপুর উপজেলার চাষের জমি ঘুরে দেখা গেছে, বগুড়ার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। দিগন্তজোড়া মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষা চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর সরিষা চাষের জমি ছিল ৩৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। সেখানে জমি চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে ৮ হাজার ১৬১ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। এ বছর বগুড়ায় ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ১১২ মেট্রিক টন। কিন্তু জমি বৃদ্ধির কারণে ফলনও বৃদ্ধি পাবে। সে হিসেবে ভালো ফলন হলে ১ লাখ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়তি ফলনের সঙ্গে এবার বাড়তি মধুও সংগ্রহ করতে পারবে মৌচাষিরা।

বগুড়া সদর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও গাবতলী উপজেলায় সরিষা চাষিদের ক্ষেতের পাশে মৌ মাছির বক্স ফেলে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির হাজার হাজার বাক্স আকারে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।

বগুড়া সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, শেরপুর, সারিয়াকান্দি কাহালু, দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠের সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণে নেমেছেন পেশাদার মৌয়ালারা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুল থেকে ফুলে। আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরে যাচ্ছে মৌয়ালাদের বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষার জমিতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেরাহার মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে এসেছেন দিনাজপুরের মাহাবুবুর রহমান। তিনি জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। এর ওপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো হয়। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি ছয় থেকে আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের শিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। এরপর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানি মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। বাক্সগুলো মৌমাছিতে ভরে গেলে সরিষা ক্ষেতের আশ-পাশের স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেসব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতে ঘুরতে থাকে মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে। পরে সেটি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। তিনি জানান, ২০০টি বাক্স বসানো হলে প্রতি সপ্তাহে ২০০ লিটার মধু সংগ্রহ করা যাবে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার গাজিউল হক জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৫টি ইউনিয়নে এ বছর ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের পাশে প্রায় পাঁচশত মৌ চাষের বাক্স বসানো হয়েছে। উপজেলায় এবার একশ মণ মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, বগুড়ায় সরিষা চাষের জমি বেড়ে যাওয়ার কারণে বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে। জেলার চাষিরা সরিষা চাষে সবসময় সফল হয়েছে। সরিষার সময়ে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ হয়ে থাকে। গত বছর ২০ হাজার লিটারের চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হয়েছে। চলতি বছর ৩০ হাজার লিটার মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মৌ চাষিরা সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহের অভিযানে নেমেছে। বেশ কিছু মধু ইতোমধ্যে সংগ্রহ হয়েছে। এটা ফুল থাকা সময় পর্যন্ত সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights