বগুড়ার গরুর মাংসের আচার এখন বিশ্ববাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
গরুর মাংসের আচার তৈরি করে বিশ্বদরবারে হাজির হয়েছেন বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা আফসানা নীরা। মহামারি করোনার সময় চাকরি চলে যায় আফসানার স্বামী সিহাবুর রহমানের। তখন দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন স্বাধীনভাবে বিকল্প কিছু করার। পুঁজি নেই। আফসানার শখের মোবাইলফোনটি মাত্র ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই শুরু করেন মাংসের আচারের ব্যবসা। দুঃসময়ের আগল ভেঙে সেই আফসানাই এখন বগুড়ার সফল উদ্যোক্তা। শুধু নিজের পরিবারের সচ্ছলতাই নয়, আফসানার প্রতিষ্ঠানে এখন ১২ জন নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আচারি ফুড নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। আগামীতে আফসানা বড় পরিসরে আচারের কারখানা স্থাপন করতে চান। আফসানার স্বামী সিহাবুর রহমান বলেন, চাকরি হারানোর পর নানা চিন্তায় পড়েছিলাম। নিজের ঘরে ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে পারতাম না। নানা জটিলতার মধ্যে ছিলাম। সে কারণে স্ত্রীর পরামর্শে আচার তৈরির কাজে সহযোগিতা করি। এখন সেই বেকার জীবন কেটে গেছে আমাদের। মাসে ১ লাখ টাকা কর্মীদের বেতন দিয়েও আরও ২ লাখ টাকা মুনাফা করি। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী এলাকায় আফসানা-সিহাবুর দম্পতির বসবাস। আফসানা বলেন, ‘২০২০ সালে আমার স্বামী সিহাবুর রহমানের চাকরি যাওয়ার পরে সংসারে পর্যাপ্ত খাবারও ছিল না। জীবনধারণের জন্য অন্যরকম কিছু একটা অবলম্বন খুঁজতে থাকি।’ তিনি বলেন, তখন ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কাজের সফলতা দেখে রান্নায় উৎসাহিত হই। সিদ্ধান্ত নিই ব্যবসা করার। পুঁজি ছিল না। তখন আমার শখের মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা পাই। সেই টাকা দিয়েই গরুর মাংসের আচার তৈরি করে ব্যবসা শুরু করি। আফসানার আত্মপ্রত্যয় আর স্বামীর সার্বিক সহায়তায় এখন তারা সফল আচার ব্যবসায়ী। বগুড়ার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে তার আচারের সুনাম। এক সময় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আচার পা বাড়ায় বিশ্ব দরবারে। এখন সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে আচার বিক্রি করছেন আফসানা। আফসানা এখন গরুর মাংসের আচার, রসুনের আচার, তেঁতুলের আচার, জলপাইয়ের আচার, আমের আচার, বরইয়ের আচার, আলুবোখারার আচার, চালতার আচার, কাঁচামরিচের আচার ও শুকনা মরিচের আচার তৈরি করছেন। বাজার থেকে মাংস কিনে তা থেকে হাড় ও চর্বি বাদ দিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে চুলায় মাংস সেদ্ধ করে হরেক রকমের মসলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মাংসের আচার। পানির ব্যবহার নেই বললেই চলে। খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করা হয় আচার তৈরিতে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা কয়েক বছরে তার জীবন বদলে দিয়েছে। বগুড়া জেলা ও রাজশাহী বিভাগ থেকে সরকারিভাবে সফল নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকরি প্রশিক্ষণও। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক মো. তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফসানা এখন সফল উদ্যোক্তা। শহরে নিজ বাড়িতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এতে নারী সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তি ও নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। এখন অনেকেই তাকে দেখে হচ্ছেন অনুপ্রাণিত।