বিজয় দিবসে নতুন শহীদ মিনার পাবে চট্টগ্রাম

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সাস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে চট্টগ্রাম সাস্কৃতিক কমপ্লেক্স। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নের জন্য সরকার ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স’ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে আগামী বছরের জুন মাসে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তর-১ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, আগামী ১৬ডিসেম্বর প্রকল্পের আওতাধীন নির্মিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে। এরই মধ্যে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের তিনটি ফ্লোরে ইতিমধ্যে লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অডিটেরিয়ামের কিছু কাজ বাকি আছে, তাও দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে। কিছু মালামাল বিদেশ থেকে আনতে হবে, এখন এলসি বন্ধ থাকার কারণে একটু সময় লাগছে। তবে আশা করি আগামী বছরের জুনে ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স’ সবার জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছিল চট্টগ্রামবাসী। এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে শহীদ মিনার ভাঙা ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে নির্মিত শহীদ মিনারে পালন করা হয় জাতীয় দিবসগুলো। চট্টগ্রাম স্মৃতিসৌধ না থাকার কারণে একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ শহীদ মিনারটি ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নগরের কেসিদে রোডে নির্মাণ করা হয়েছিল। নতুন নির্মিত শহীদ মিনারের বেদির উচ্চতা ১১ ফুট বাড়ানো হয়েছে। পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এখানে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি সভা, সেমিনারও আয়োজনের সুযোগ থাকবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নে সরকার চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার পর ২০১৬ সালের আগস্টে নকশা চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। এরপর ২০১৮ সালের শুরুতে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২৮১ কোটি টাকা ব্যায়ে গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার, একটি মাল্টিপারপাস হল ও সেমিনার হল ও ৭৪১৩ দশমিক ৬০ বর্গফুট আয়তনের জনসমাগম স্থান তৈরি করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ। মূল সড়কের দুই পাশে যাতায়াতে তৈরি করা হয়েছে টানেল। গ্রন্থাগার ভবনের নিচ তলায় থাকবে সার্ভিস সেকশন, যেখানে বই বাছাই, ফিউমিগেশন হবে। গ্রাউন্ড ও প্রথম ফ্লোরে থাকবে অফিস, ২য় ফ্লোরে সেমিনার ও মিটিং রুম এবং তৃতীয় তলা থাকবে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য। চতুর্থ ও পঞ্চম ফ্লোরে জেনারেল লাইব্রেরি, ষষ্ঠ ফ্লোরে চিলড্রেন লাইব্রেরি, সপ্তম ফ্লোরে পেপার লাইব্রেরি, অষ্টম ফ্লোরে রেফারেন্স লাইব্রেরি, নবম ও দশম ফ্লোরে সায়েন্স লাইব্রেরি, এগারোতম ফ্লোরে ট্রেনিং ইউনিট, ১২তম ফ্লোরে আইসিটি ইউনিট, ১৩তম ফ্লোরে স্পেস ফর ফিউচার প্রোভিশন, ১৪তম ফ্লোরে গেস্ট হাউজ। গ্রন্থাগার অংশে সাধারণ পাঠাগারে ২৫০ জন, বিজ্ঞান পাঠাগারে ১৫০ জন, রেফারেন্স পাঠাগারে ১০০ জন, পত্রিকা/সাময়িকী পাঠাগারে ১০০, প্রতিবন্ধী পাঠাগারে ৫০ জন, উন্মুক্ত পাঠাগারে ১৫০ জন, শিশু কিশোর পাঠাগারে ১০০ জন পাঠক এক সঙ্গে বসে বই পড়তে পারবে।

এছাড়া ৪০-৫০ জন বিশিষ্ট সভাকক্ষ ও সেমিনার কক্ষ, ১৫০ আসন বিশিষ্ট বড় সেমিনার কক্ষ রয়েছে। আইসিটি লাইব্রেরি থাকবে ৩০টি কম্পিউটার। এছাড়াও থাকবে একটি রেস্ট হাউজ, ২টি ভিআইপি কক্ষ ও সাধারণ ডরমেটরি কক্ষ। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এর পাশেই। প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে সেমিনার ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, তৃতীয় ফ্লোরে ক্যাফেটারিয়া ও প্রজেকশন হল, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে মিলনায়তন। গ্রন্থাগারের পাশে চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। মুসলিম ইনস্টিটিউট অংশে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট মিলনায়তন, ৩০০ থেকে ৩৫০ আসন বিশিষ্ট মিনি অডিটোরিয়াম থাকবে। এখানে ২০০ ও ১০০ আসন বিশিষ্ট দুটি সেমিনার কক্ষ, ১টি আর্ট গ্যালারি ও স্যুভেনির শপ থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights