মহাকাশে ২৮৬ দিন, শরীরে কী কী প্রভাব পড়তে পারে সুনীতাদের?
অনলাইন ডেস্ক
দীর্ঘ প্রায় ন’মাস মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন মার্কিন নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তার সঙ্গী বুচ উইলমোর।
সাধারণত দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটালে মানুষের শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। বেশি সময়ের জন্য কোনও মহাকাশ অভিযানে থাকলে হাড় এবং পেশির ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা-সহ আরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে নভোচারীদের। অতীতে এর মধ্যে কিছু সমস্যা ভালভাবে সামাল দিয়েছেন মহাকাশচারীরা, আবার কিছু সমস্যা রহস্যই রয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের অভিযানগুলো সাধারণত ছ’মাসের জন্য হয়ে থাকে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের এক বছর পর্যন্তও সেখানে থাকতে হয়। মহাকাশ গবেষকদের বিশ্বাস, এই সময় পর্যন্ত নভোচারীরা নিজেদের স্বাস্থ্য ঠিক ঠাক বজায় রাখতে পারেন। সাধারণ অবস্থায় ভারোত্তোলন করলে পেশি এবং হাড় মজবুত হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির একটি বড় ভূমিকা থাকে। কিন্তু মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথে মাধ্যাকর্ষণের কোনও অস্তিত্ব নেই।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর কক্ষপথ ধরে ঘোরার সময়ে হাড় এবং পেশির ক্ষয় রোধ করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তিন ধরনের ব্যায়ামের যন্ত্র ব্যবহার করেন নভোচারীরা।
এর মধ্যে একটি যন্ত্র রয়েছে যা নভোচারীর শরীরের ওজন ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে। ২০০৯ সালে এই যন্ত্রটি বসানো হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে।
মহাকাশে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের অধ্যাপক রিহানা বোখরি জানান, ওই যন্ত্র ব্যবহার শুরুর পর থেকে মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফেরার পর হাড়ে চিড় ধরার সমস্যা অনেকটা কমে গেছে।
এছাড়া আরও একটি বড় সমস্যা হল পৃথিবীতে ফেরার পরে অনেক ক্ষেত্রে শরীরের ভারসাম্যের অভাব বোধ করেন নভোচারীরা। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভাগের ইমানুয়েল আর্কিটার মতে, প্রত্যেক নভোচারীরই এই সমস্যা হয়। এমনকি যারা অল্প কয়েক দিনের জন্য যান, তাদেরও এই সমস্যা দেখা যায়। তাদের জন্য নাসার ৪৫ দিনের একটি কর্মসূচি রয়েছে। মহাকাশ থেকে ফেরার পর ওই ৪৫ দিন ধরে নভোচারীরা শরীর পুনর্গঠন করেন। তৃতীয় সমস্যাটি হল, মহাকাশে শরীরে বিভিন্ন তরল সব জায়গায় সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। পৃথিবীতে থাকাকালীন মাধ্যাকর্ষণের জন্য শরীরের তরলের টান থাকে দেহের নীচের দিকে। মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ না থাকার ফলে তা শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মূত্রে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনা থাকে। তথ্যসূত্র: নাসা, এবিসি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, এপি