মহামারীর অভিঘাত পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের অর্থনীতি, ৫% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

অনলাইন ডেস্ক

করোনা মহামারীর অভিঘাত পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে চীনের অর্থনীতি। আশা করা হচ্ছে, এবার চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫ শতাংশ।

বুধবার প্রকাশিত ফিচ রেটিংসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারী গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই টালমাটাল করে দিয়েছে। চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। মহামারীর কারণে বারবারই মুখ থুবড়ে পড়ছে চীনের অর্থনীতি। বিশেষ করে টানা লকডাউনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তার ওপর দীর্ঘ সময় সীমান্ত বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। তবে চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলল ফিচ রেটিংসে।
আগেই আশা করা হয়েছিল চীন ফিরবে। তবে এবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকেও বাড়ানো হয়েছে। এর কারণ বেইজিংয়ের করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। তাতেই ভোক্তা ব্যয় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেশ দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে এবং তা হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

গত বছরও চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম হয়েছিল। সে বছর দেশটির জিডিপি বেড়েছিল ৩ শতাংশ এবং টানা কয়েক দফা লকডাউনে তা বেশ ক্ষতির মুখেও পড়েছিল। রেটিং এজেন্সির প্রত্যাশা, চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম খুবই শক্তিশালী হবে। যার মাধ্যমে মহামারীর ধাক্কা থেকে ফিরে আসাও যাবে।

দি ইকোনমিস্ট এক নোটে বলেছে, পুনরুদ্ধার স্থিতিশীল করতে পারাটাই ভবিষ্যতে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে। কিন্তু এর মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ম্যাক্রো পলিসি সহজ করার আশা করা যাবে না। সম্প্রতি চীনের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) অর্থাৎ যা দিয়ে উৎপাদন ও সেবার বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিমাপ করা হয়, সেটাও বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমেও প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশটির পিএমআই জানুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৫০ দশমিক ১, যা আগের মাসেই ছিল ৪৭। সেই সঙ্গে সেবামূলক পিএমআই বেড়ে হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪, যা ২০২২ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ। এই সূচক ৫০-এর ওপরে গেলে ধারণা করা হয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে, আর এর নিচে গেলে বোঝানো হয় তা সংকুচিত হয়েছে।

ইউবিএস গ্রুপের প্রত্যাশা চীনের খরচ মাঝারি হারে বাড়বে। তবে সেই সঙ্গে তারা পূর্বাভাসে জানিয়েছে, গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে তারা বরং আরও সতর্ক হবে।

চীনের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ওয়াং তাও বলেন, “চাকরির ক্ষেত্র ও পারিবারিক আয় উন্নত হওয়ার পথে রয়েছে, তবে গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাস হয়তো পুরোপুরি ফিরে আসবে না বরং তার বদলে তারা সতর্ক থাকবে।”

বর্তমানে চীনের খরচ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগে যেভাবে ভাবা হয়েছিল তার তুলনায় অনেক দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কারণ ২০২২ সালের বহুমুখী জিরো কোভিড-১৯ নীতি থেকে তারা বেরিয়ে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের পরিবারগুলোর অতিরিক্ত সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ৪ ট্রিলিয়ন থেকে ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে, কিন্তু ইউবিএস বলছে, এসব সঞ্চয় চলতি বছর ভাঙা হবে না। পরবর্তী সময়ে ভোক্তাদের আচরণ স্বাভাবিক হলে এবং বেশি বেশি সঞ্চয় থেকে সবাই বেরিয়ে এলে ২০২৪ সালে এবং তার পরে ভবিষ্যতের ব্যয় পুনরুদ্ধার সহজ হবে। সূত্র: সিএনবিসি, রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights