যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় বন্ধ থাকে আকাশপথও

অনলাইন ডেস্ক

পূর্ব এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ‘কলেজ স্কলাস্টিক অ্যাবিলিটি টেস্ট (সিএসএটি)’। এদিন পরীক্ষা উপলক্ষে রাস্তাঘাট থাকে সুনসান, শহর থাকে কোলাহলমুক্ত। এমনকি আকাশও থাকে নীরব। বন্ধ থাকে সব ধরনের ফ্লাইট উঠানামা।

এই দিনটি দক্ষিণ কোরিয়ায় সুনেং নামে পরিচিত। এদিন শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয় বরং পুরো জাতির জন্য একটি বিশাল মাইলফলকের দিন।

দক্ষিণ কোরীয় সমাজে সুনেং শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা নয়। এটি শিক্ষার্থীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের এক বিশেষ দিশা দেখায়। এ পরীক্ষা শুধু শিক্ষাজীবন নয়, চাকরি, আয়ের পথ এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই, সুনেংয়ের দিন দেশটির সবকিছু থেমে যায় যেন কোনও রকম বিঘ্ন ঘটতে না পারে।
পরীক্ষা চলাসময়ে কেমন থাকে পরিবেশ

এদিন, পরীক্ষার্থীদের মনোযোগে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দুপুর ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়, যাতে ইংরেজি শ্রবণ পরীক্ষার ২০ মিনিটের সময় সুনির্দিষ্ট নীরবতা বজায় থাকে। তাছাড়া, দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয় এবং যানবাহনের হর্ন বাজানো কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়।

বিশেষ সহায়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এদিন শহরের রূপ বদলে যায়। দোকানপাট দেরিতে খোলে, স্টক মার্কেটও দেরিতে চালু হয়। যানজট এড়াতে অতিরিক্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয় এবং ১০ হাজারের বেশি পুলিশ কর্মকর্তা সড়কপথে মোতায়েন থাকে। দেরি করা পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকে পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং অ্যাম্বুলেন্স।

৮ ঘণ্টার ম্যারাথন পরীক্ষা

২০২৪ সালে সুনেং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় ১৮ হাজার ৮২ জন বেশি। সারা দেশে ১ হাজার ২৮২টি কেন্দ্রে ৮ ঘণ্টার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা ৫টি বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরীক্ষা দেয়: কোরিয়ান ভাষা, গণিত, ইংরেজি, কোরিয়ান ইতিহাস এবং সোশ্যাল স্টাডিজ। এছাড়াও, ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রয়েছে ফরাসি, চীনা, জাপানি, রাশিয়ান ও আরবি ভাষা।

সুনেং: দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির প্রতীক

সুনেং শুধু একটি পরীক্ষা নয়; এটি দক্ষিণ কোরীয় শিক্ষার প্রতীক। দেশটির অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের জন্য ত্যাগের চিত্র। পরীক্ষায় সফল হলে শিক্ষার্থীরা এক নতুন জীবনের সূচনা করে।

একজন সফল শিক্ষার্থী বলেন, আমরা জানি, আমাদের পরিশ্রমের মূল্য। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারি।

এই পরীক্ষা দক্ষিণ কোরীয়দের এক জাতি হিসেবে উত্থান এবং তাদের ভবিষ্যতের প্রতি এক অদম্য বিশ্বাসের প্রতীক। সুনেং, যা শুধু একটি পরীক্ষা নয়, এটি একটি জাতির শক্তি ও স্বপ্নের ঐতিহ্য। সূত্র: দ্য কোরিয়া টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights