রপ্তানি কমছে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে প্রান্তিকে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয়ের যে টার্গেট বা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার গত ১১ মাসেও তা পূরণ হয়নি। আরও আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিক আয় কমছে। আয় কমছে ইউরোপের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য জার্মানিতেও। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াতেও রপ্তানি কমেছে। এমন কী ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পরও রপ্তানি কমেছে চীনে। গতকাল প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে (১১ মাসে) প্রান্তিকে পণ্য খাতে মোট রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৫২ কোটি মার্কিন ডলার। এটি গত অর্থবছরে অর্জিত রপ্তানি আয়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে একই সময়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭১৭ কোটি মার্কিন ডলার। তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের যে টার্গেট ছিল তার চেয়ে এই আয় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কম। জুলাই-মে প্রান্তিকে ৫ হাজার ২৪৩ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের টার্গেট ছিল। সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য খাতে মোট ৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের টার্গেট নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেখা যাচ্ছে, টার্গেট পূরণ করতে হলে আগামী এক মাসে (জুন) ১ হাজার ৬৪৮ কোটি মার্কিন ডলার পণ্য রপ্তানি করতে হবে। সর্বশেষ গত মে মাসে অর্জিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৪৮৪ কোটি মার্কিন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারির কারণে গত বছর রপ্তানি আয় কম ছিল। ফলে তার তুলনায় এ বছর পণ্য খাতে রপ্তানি আয় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবার সেই টার্গেট পূরণ করা অসম্ভব মনে হচ্ছে। সরকারে ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে নতুন বাজার অনুসন্ধানসহ বাজার সম্প্রসারণে দেশের বাইরে মেলা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পুরোদমে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

বড় বাজারে রপ্তানি কমছে : একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে রপ্তানি আয়ের প্রধান গন্তব্য জার্মানি। এই দুটো দেশেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জুলাই-মে প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। একই সময়ে জার্মানিতে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় কমেছে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে প্রান্তিকে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। আয় কমার দিক দিয়ে এরপরেই রয়েছে রাশিয়া। গত ১১ মাসে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এশিয়ার মধ্যে চীনেও রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়ে জাপান, কোরিয়া, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রপ্তানি খাতের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধের আগে রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে। এসব দেশের মধ্যে জার্মানি, পোল্যান্ড, তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ওই দেশগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্য আর রপ্তানি হচ্ছে না। ফলে রাশিয়া ছাড়াও সেসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো বড় গন্তব্যগুলোতে রপ্তানি কমার কারণ জানতে চাইলে ইপিবির সিইও ও ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে চাহিদা কমেছে। এ কারণে রপ্তানি কিছুটা কমেছে। তবে দেশটিতে মে মাসে রপ্তানি আয় আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ জোনে জার্মানি ছাড়া অন্য দেশগুলোতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। জার্মানিতে কী কারণে রপ্তানি কমছে সেটি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights