রেল ছোঁবে সমুদ্রসৈকত

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের কাজ বাকি আছে মাত্র ১৫ শতাংশ। এখন চলছে শেষ দুই প্রান্তের উন্নয়ন কাজ। এ কাজগুলো শেষ হলেই ট্রেন ছুটবে কক্সবাজার। সেপ্টেম্বরে সমুদ্রসৈকত ছোঁবে রেল। প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে যাবে একটি রেল। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দুটি সময়সূচির। চট্টগ্রাম থেকে পর্যটক-যাত্রীরা ট্রেনে করে যাবেন পর্যটননগরী কক্সবাজারে।

ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নির্মাণ হয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক ‘লাগেজ স্টেশন’, নির্মিত হয়েছে নান্দনিক স্টেশন। দৃশ্যমান প্রায় ৮৫ কিলোমিটার রেললাইন। প্রতিদিন কাজ করছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। পণ্য পরিবহনে থাকবে বিশেষ ‘রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস’।

রেললাইন চালু হলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। উন্মোচিত হবে পর্যটন শহরের নতুন দিগন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, রেললাইন নির্মাণের কাজটি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। এখন দোহাজারী প্রান্ত ও কক্সবাজার প্রান্তের উন্নয়ন কাজ চলছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ঢাকা-কক্সবাজর রেল চলাচল। বাণিজ্যিক ট্রেন চালু হবে আরও কয়েক মাস পর। তবে কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণে প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে একটি ট্রেন যাবে কক্সবাজার। পর্যায়ক্রমে যোগ হবে রেল। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ১৪৭টি মিটার গেজ কোচ দিয়ে নতুন ট্রেনগুলোর রেক-কম্পোজিশন সাজানো হচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসের জন্য রেলভবনে দুটি সময়সূচি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তুতি অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক নম্বর ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ওই ট্রেনটি কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ২ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে সকাল সাড়ে ৯টায়। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে রাত ১০টায়। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে নির্মিত হয়েছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। তাছাড়া সহজ ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। একই সঙ্গে প্রকল্প নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘ্নে চলাচল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। নয়টি স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে আছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।

এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়াও পুরো রেলপথে নির্মিত হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights