শরণার্থীশিবির থেকে উঠে আসা গুলবাদিন অস্ট্রেলিয়া-বধের নায়ক

অনলাইন ডেস্ক

আফগান অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইবের শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের শরণার্থীশিবিরে। সেখানে মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই প্রতিদিন লড়াই করতে হতো তার পরিবারকে। পরবাসেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় তার। তবে কে জানত, তার হাত ধরেই একদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়া-বধের গল্প লিখবে আফগানরা।

গত রবিবার (২৩ জুন) কিংসটাউনে আর্নস ভ্যালে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের ১৪৮ রানের জবাবে খেলতে নেমে বোলিং তোপে ১২৭ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গুলবাদিন নায়েব। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন আফগান অলরাউন্ডার, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। তিনি আউট করেছেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড ও প্যাট কামিন্সকে।
সেন্ট ভিনসেন্টের মন্থর উইকেটে কী করতে হবে তা প্রথম ইনিংসেই বুঝে গিয়েছিলেন গুলবাদিন নায়েব। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ঝুঁকি নিতে ছিলেন না কোনোরকমের দ্বিধায়। অধিনায়ক রশিদ খানও আস্থা রাখেন তার ওপর। এর পরের গল্পটা কেবলই ইতিহাস।

রশিদ যখন ১১তম ওভারে গুলবাদিন নাইবের হাতে প্রথম বল তুলে দেন, অস্ট্রেলিয়া তখন চাপ কাটানোর স্বস্তিতে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মার্কাস স্টয়নিস থাকায় জয়ের সম্ভাবনা হেলে থাকে তাদের দিকেই। কিন্তু গুলবাদিন নাইবের ছিল ভিন্ন পরিকল্পনা। টানা চার ওভারের স্পেলে ২০ রান দিয়ে এ দু’জন তো বটেই, শিকার করেন আরও দুজনকে।

তার অসাধারণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে ইতিহাস ঘটিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মতো চ্যাম্পিয়ন দলকে হারানোটা তাই আফগানদের কাছে বড় অর্জনই।

৪ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক গুলবাদিন বলেন, ‌এর জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। আমার তো বটেই, আমার দেশ, দেশের মানুষের জন্য এটি এক বিশাল মুহূর্ত। আমার বলার কোনো ভাষা নেই তবে সেসব সমর্থকদের ধন্যবাদ যারা আমাদের ক্যারিয়ারে ও ক্রিকেটীয় যাত্রায় সমর্থন দিয়ে গেছে। নিজেদের ব্যাটিং ইনিংস থেকেই বুঝে ফেলেছিলাম কীভাবে বল করতে হবে। আমার ওপর আস্থা রাখায় রশিদকে ধন্যবাদ। এটি পুরোপুরি দলীয় প্রচেষ্টা, বিশেষ করে যেভাবে ইব্রাহীম-রহমানউল্লাহ ব্যাট করেছে এবং নাভিন যেভাবে বোলিং করেছে।

তিনি আরও বলেন, অবশেষে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পেরেছি। এটা আফগানিস্তানের জন্য বিশাল অর্জন। গত দশ বছরে অনেক কিছুই অর্জন করেছি আমরা, কিন্তু এটা বড় অর্জন। গত দুই মাসে কঠোর পরিশ্রম করেছি আমরা এবং এর ফল আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে আমরা অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছি এবং এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন দল, তাই আমাদের কাছে এটি বড় টুর্নামেন্ট। সৌভাগ্যবান যে এমন দল ও ম্যানেজমেন্ট পেয়েছি আমি।

এদিকে সুপার এইটের শেষ ম্যাচ আগামী ২৫ জুন বাংলাদেশকে হারালেই সেমিফাইনালের রাস্তা সহজ হবে আফগানিস্তানের জন্য। তবে ভারত যেন অস্ট্রেলিয়াকে হারায় সেই প্রার্থনাও করতে হবে তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights