শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতার হয়রানি, তদন্তের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইন্স্টিটিউটে ছাত্রলীগ কর্মীদের নকলে বাধা দেয়ায় এক শিক্ষককে হুমকি দেয়া ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক হলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রকাশ শিকদার, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন ইন্স্টিটিউট ছাত্র সংসদের জিএস শাহাদাত হোসেন ওমর।

খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, প্রকাশের অভিযোগ তদন্তে পুলিশ আদালতের কাছে অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্তে শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ছাত্রদের দেয়া একটি অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান ওসি। সেটিতে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্ররা।

ভুক্তভোগী প্রকাশ শিকদারের অভিযোগ, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা চলার সময় শাহদাত পরীক্ষার হলে গিয়ে কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চান। তখন চার ছাত্রের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের পছন্দমতো আসনে পাশাপাশি বসতে বলেন শাহাদাত। পরে তারা নিজেদের পছন্দের আসনে বসে। ওই ছাত্রদের হাতে মোবাইল ছিলো, নকল করা ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। শাহাদাত তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্রদের পুনরায় তাদের আগের আসনে পাঠান প্রকাশ। এ কারণে তারা নকলে সুবিধা করতে না পেরে এক ঘন্টা পর তিনজন উত্তরপত্র জমা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যায়।
এই তিন ছাত্র হলো- মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। এর কিছুক্ষণ পর শাহাদাত আরো দুজনসহ প্রকাশের কাছে এসে ওই তিন ছাত্রের উত্তরপত্র ফেরত চায়। জমা দেওয়া উত্তরপত্র ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই জানালে তারা প্রকাশের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। হত্যাসহ নানা হুমকি দেয়। এসময় কৌশলে ঘটনার কিছু অংশের ভিডিও ধারণ করে রাখেন প্রকাশ। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ঘটনাস্থলে এসে ওই তিন ছাত্রের উত্তরপত্র ফেরত দেন।

এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঘটনার পরদিন অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান ও খুলশী থানায় অভিযোগ দেন ওই শিক্ষক। এরপরও প্রকাশকে হুমকি ও উত্যক্ত করে শাহাদাত ও তার অনুসারীরা। সর্বশেষ ৩ এপ্রিল ইন্স্টিটিউট থেকে বাসায় ফেরার পথে উত্যক্তের শিকার হন তিনি। এর প্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্তে আদালতের অনুমতি চায় পুলিশ। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালত পুলিশকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।

এদিকে ঘটনায় পরদিন উপাধ্যক্ষ স্বপন নাথকে প্রধান করে এবং মাইনুল হুদা সিরাজী ও জাবেদ ইকবালকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি ১৯ দিন পর অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি প্রকাশের। যদিও অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমানের দাবি, প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে দোষী কারা বা তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি।

অভিযোগ অস্বীকার করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষক ওইদিন পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। কয়েকজন ছাত্র প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে উত্তরপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। পরে আমি তাদের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাজে কথা বলার কারণ জানতে চেয়েছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights