শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন, থাকছে চার স্তরে নিরাপত্তা

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

ঈদ জামাতের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় থাকছে চার স্তরে নিরাপত্তা। এবার এ ঈদগাহের জন্য এটি ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদ জামাত।

এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী শটগানের গুলি ফুটিয়ে ঈদের জামাত শুরু করা হবে। ইমামতি করার কথা রয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহের নিয়মিত ইমাম ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তার অনুপস্থিতিজনিত কারণে বিকল্প ইমামও রাখা হয়েছে।

ঈদগাহ মাঠের দাগকাটা, মিম্বর ও দেয়ালে রং করা, মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানানো ও মাইক স্থাপন, ওজু খানা, টয়লেট সংস্কারসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
শোলাকিয়ায় ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলাকে মাথায় রেখে প্রতিবছর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। এবারও অনেকটা সেরকমই থাকছে। ইতোমধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন শোলাকিয়া ময়দান।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শোলাকিয়ায় এবার সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ১৩০০ পুলিশ, র‌্যাবের ৮টি টিম (প্রতি টিমে ৬ জন করে) ও ১০০ বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণের জন্য বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের দিন মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে ১৩টি আর্চওয়ে। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। থাকবে ড্রোন ক্যামেরাও। এছাড়া আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। বোম ডিসপোজাল টিমও থাকবে। ঈদের দিন এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের দিন মুসল্লিদেরকে শুধুমাত্র জায়নামাজ নিয়ে মাঠে আসার অনুরোধ করেছেন।

রবিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, র‌্যাব-১৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ও কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করেন।

তারা জানান, এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো হুমকি পাওয়া যায়নি। এরপরও ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং ঈদ জামাত সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বদ্ধপরিকর বলেও জানান তারা। প্রতিটি মুসল্লিকে নিরাপত্তা বেষ্টনির ভিতর দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে। মুসল্লিদেরকে দিয়াশলাই, গ্যাস লাইটার ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদ জামাত আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আনসার, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেটরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তা ও ঈদ জামাত নির্বিঘ্ন করতে যা যা করার সবই করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, দূরের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈদের দিন শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে সকাল পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে একটি ট্রেন এবং ভৈরব থেকে সকাল ছয়টায় একটি ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। ঈদ জামাত শেষে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ স্টেশন ছেড়ে যাবে দু’টি ট্রেন।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, স্থানীয় এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু এরপরও ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদ জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে এতটুকু ভাটা পড়েনি।

১৮২৮ সালে ঈদ জামাতের মধ্যদিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গোড়াপত্তন হয়। জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদের ইমামতিতে প্রথমবার ঈদের জামাতে ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। আবার কারও মতে, এ পরগণায় খাজনা আদায়ের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। সে কারণে এর নামকরণ হয় শোয়ালাখিয়া থেকে শোলাকিয়া। ১৯৫০ সালে শহরের হয়বতনগরের দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। পরে শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির দানকৃত জমিসহ আরও কিছু জমি এ ঈদগাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহের অবস্থান। ঈদুল ফিতরে মাঠ ছাড়িয়ে পাশের সড়ক, সেতুসহ অলিগলিতেও মুসল্লিরা ঈদের জামাত আদায় করেন। বর্তমানে সব মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights