সুন্দরবনে বাড়ছে বিদেশি পর্যটক

নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনে বাড়ছে বিদেশি পর্যটক। গত তিন বছরে প্রায় ৬ হাজার বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ১০৩ জন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৪৩ জন ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৬২২ জন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। জানা যায়, বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, মায়া হরিণ, লোনাপানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এ বনে। সেই সঙ্গে নয়নাভিরাম সবুজের হাতছানি- প্রতি মুহূর্তেই রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে সুন্দরবন। খুলনা অঞ্চল বন সংরক্ষক দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৭৬৩ জন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন দেখতে আসেন। এরপর প্রতিবছর গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক বিদেশ থেকে আসতে থাকেন। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে হঠাৎ করেই এ সংখ্যা কমে মাত্র ৩২০-এ দাঁড়ায়। ওই সময় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রচারণার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। এর পরের তিন বছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। তবে একই সময়ে সুন্দরবনে দেশি পর্যটক কিছুটা কমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৪৩ জন দেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হয় ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৯৩ জনে। ভোগান্তি, অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাহীনতা ও প্রচারের অভাবকে এ জন্য দায়ী মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ট্যুর অপারেটর নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, নানা সীমাবদ্ধতায় সুন্দরব কেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প বিকশিত হচ্ছে না। অনুন্নত যাতায়াতব্যবস্থা, অব্যবস্থাপনা, বনবিভাগের উদাসীনতায় পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

তবে দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় বনের আন্ধারমানিক, আলিবান্দা, শেখেরটেক ও কালাবগীতে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে বন অধিদপ্তর। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শেখেরটেক পর্যটন কেন্দ্রে শিবসা নদীর অপরূপ দৃশ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ৪০০ বছরের পুরাতন মন্দির, ওয়াচ টাওয়ার, বাঘের আনাগোনা রয়েছে। নতুন পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণীর পদচারণ, পাখি পর্যবেক্ষণ, বনের নির্জনতা উপভোগ করতে ফুট ট্রেইল, ঝুলন্ত ব্রিজ, গোলঘর ও স্যুভেনি শপ নির্মাণ করা হয়েছে। বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, নতুন পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সুন্দরবনের আশপাশে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-কটেজ গড়ে উঠেছে। সেখানে কাছাকাছি থেকে রাতের বেলায় বনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস সুন্দরবন ভ্রমণের সেরা সময়। এ সময় নদী ও সমুদ্র শান্ত থাকে বলে সুন্দরবনের সব দর্শনীয় জায়গা সহজেই ঘুরে দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights