সৈকতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানালেন পর্যটকরা

সময় তখন বিকেল ৫টা ১১ মিনিট। শীতের হিমেল হওয়ায় চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। সামনে ঢেউয়ের গর্জন। এরই মাঝে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায় ২০২২ সালের শেষ সূর্য। অনেক প্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি ও নানা ঘটন আর অঘটনকে ছাপিয়ে শেষ হলো আরও একটি বছর। নানা কারণে এবারও উন্মুক্ত এলাকায় থার্টিফার্স্ট নাইটের আয়োজন বন্ধ। এরপরও কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়েছে। বছরের শেষ সূর্য ডোবা দেতে সৈকতে হাজির হন প্রকৃতিপ্রেমীসহ স্থানীয় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।

কনকনে শীত থাকলেও বর্ষবিদায়ের দিনে সূর্য লাল আভা ছড়িয়ে বিদায় নিয়েছে। রোববারের সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে পথচলা শুরু হবে ২০২৩ সালের। বিদায়ী বছরের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় ২০২৩ সালকে স্বাগত জানিয়েছেন সবাই। উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন সব শ্রেণির মানুষ।

রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় খোলা জায়গায় থার্টিফার্স্ট নাইটের সব ধরনের আয়োজন বন্ধ। তবে, অতীতের মতো তারকা হোটেলগুলো নিজ উদ্যোগে অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান করছে। নিজেদের হোটেলে অবস্থান করা অতিথিদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে এসব আয়োজন। কিন্তু বহিরাগতদের জন্য বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে সাশ্রয়ী দামে গালা ডিনারের আয়োজন করেছে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড। একই ধরনের আয়োজন রেখেছে সায়মন বিচ রিসোর্ট, সি পার্ল হোটেল অ্যান্ড স্পা, কক্স টু ডে হোটেল ও লং বিচ।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মৌসুমের এ সময়টা পর্যটকরা বেড়াতে কক্সবাজারকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ৭০-৭৫ শতাংশ এক থেকে দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যান। এবছর এ সুযোগ অবারিত নেই- তাই পর্যটক আগমন কমেছে। এরপরও ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩-কে স্বাগত জানাতে লাখো পর্যটকের মিলনমেলা হয়েছে কক্সবাজার। প্রায় হোটেলে ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল সচল থাকলে পর্যটকের ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতো। কিন্তু এখন রোববারই শেষ হতে পারে পর্যটক সমাগম।

হোটেল-মোটেল জোনের সি-নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, বিগত বছরগুলোর শেষদিন সারাদেশ থেকে লোকজন কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসতেন। এবারও একইভাবে লোকজন এসেছেন। অনুষ্ঠান না থাকলেও বিগত সময়ের মতো থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। এতে যোগছিল স্থানীয়রাও।

শনিবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এসেছেন সৈকতে। শীতের মাঝেও অনেকে সমুদ্রে গোসল করছিলেন। অধিকাংশই বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করেছেন।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা পরিবার নিয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে এসেছেন। চাকরির সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করায় বিগত বছরের ন্যায় এবারও বছরের শেষ সূর্যাস্তের সাক্ষী হতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বালিয়াড়িতে যান। সাক্ষী হন ২০২২ সালের বিদায়ী সূর্যাস্তের। এটি খুবই উপভোগ্য বলে উল্লেখ করেন সমীর রঞ্জন সাহা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে থার্টিফাস্ট নাইটে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।

এদিকে, বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছেন বলে জানা গেছে।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, পটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করতে পারবে না কেউ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে দেশের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা বসত কক্সবাজার সৈকতে। তবে গত বছরের মতো এবারও বাইরে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান না থাকায় এর ব্যত্যয় ঘটেছে। এরপরও নতুন বছর বরণ ও বর্ষবিদায়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস আলোকিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights