হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং সুবিধা ও পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক-শ্রমিক সমিতির ডাকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
রবিবার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়। আর এতে করে জেলার সাথে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। হঠাৎ করে শ্রমিক নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তারা। অনেকে আবার এ ধর্মঘটকে শ্রমিকদের নৈরাজ্য বলেও আখ্যা দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের পৌর বাস টার্মিনালে অনেক যাত্রী এসে যানবাহন না পেয়ে রাস্তার পাশে মালামাল নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোন পরিবহন না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওইসব যাত্রীরা। এর মধ্যে আবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি যেন দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেককে আবার মালামাল নিয়ে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ছোট ছোট যানবাহন আবার কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিযে যাত্রীদের নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেন।
সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় গণপরিবহনে সরকারি চাকরিজীবীরা বেশি চলাচল করে। হঠাৎ করে পরিবহন বন্ধ হওয়ায় কর্মস্থলে যেতে বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের।
ফয়েজ উদ্দিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এভাবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস চালানো বন্ধ রাখা ঠিক না। এতে আমরা সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। রাহিম আহমেদ নামে এক যুবক জানান, আমি আমার এক আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য সিলেটে যেতে এসেছিলাম। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে আমাদের। একই দুর্ভোগের কথা জানালেন রোকশানা আক্তার নামে এক নারী। তিনি বলেন, এভাবে হঠাৎ করে পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সজিব আলী বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স রাখার জায়গা থাকলেও কর্তৃপক্ষ আমাদের অ্যাম্বুলেন্স রাখতে দিচ্ছে না। তাই আমরা চাই আমাদের একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড দেয়া হোক। এছাড়াও আমাদের আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানে আমরা প্রশাসনকে নয় দফা দাবি জানিয়েছি।
ধর্মঘটকারীদের দাবি, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে অন্তত ৪০টি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহন করে আসছে। সম্প্রতি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে জরুরি সেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করে আসছে জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি। এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে গতকাল শনিবার রাতে জরুরি সভা করে পুরো জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
এদিকে, ধর্মঘটকে অযৌক্তিক ও অমানবিক বলে প্রত্যাখান করেছে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ সকল সাংবাদিক। একই সাথে তাদের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার রাত ৮টায় হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক জরুরি সাধারণ সভায় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে তাদের আন্দোলনের সকল সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ সাগরের পরিচালনায় জরুরি সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার জানান, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যত্রতত্র অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়ের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। আশঙ্কাজনক অনেক রোগী নিয়ে কোনো যানবাহন জরুরি বিভাগে যথাসময়ে আসতে পারে না। পাশাপাশি চালকরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করেন। এসব কারণে হাসপাতালে পার্কিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাসপাতালে ভেতরে পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা করে দেয়া হবে না। অন্য স্থানে কিভাবে তাদের স্ট্যান্ড করে দেয়া যায় সে বিষয়টি নিয়ে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলাপ আলোচনা করছেন।