২০ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাসসহ বকেয়া পরিশোধের দাবি

অনলাইন ডেস্ক

‌২০ রমজানের ভেতর সকল পোশাক কারখানায় শ্রমিকের মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন এবং বেসিকের সমান বোনাস, ওভারটাইম সহ সকল বকেয়া পরিশোধ ও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে নানা দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের সঞ্চালনা ও কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রবীর সাহা, আন্তর্জাতিক সম্পার্ক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব ইরান, কেন্দ্রীয় নেতা শামীম আহমেদ, হযরত বিল্লাল ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ ১৮ রোজা সামনে ঈদুল ফিতর, এবারও ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের দেওয়া তথ্য ৪১৬ কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এই খবরে সাধারণ শ্রমিকরা অনিশ্চয়তা ও শঙ্কায় আছে। ঈদের সময় বেতন-বোনাসের প্রশ্ন আসলেই মালিকরা কাজ নাই বলেন। অথচ সরকারি ইপিবি তথ্যানুযায়ী চলতি ফেব্রুয়ারিতে এক মাসেই ৪৪৯ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে যা ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৩. ৯৩% রপ্তানি বেড়েছে।

তারা আরও বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে এ বছর রপ্তানির হার বৃদ্ধি পেয়েছে । ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে মালিকরাই বলছে। অথচ শ্রমিকদের বোনাস বেতন দেবার কথা আসলে মালিকরা নানা বাহানায় সরকারের কাছে ঋণ নেয়, বেতন বোনাস নিশ্চিত করে না। নেতৃবৃন্দ ২০ রমজানের মধ্যে দ্রুত শ্রমিকদের বেতন এবং বেসিকের সমান মজুরি, ওভারটাইমসহ সকল পাওনা পরিশোধের আহ্বান জানান।

তারা বলেন, বছরে ঈদে শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে যাতে ভালো সময় কাটাতে পারে সে বিষয়ে সরকার ও মালিককে উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে। ঈদ বা যে কোন উৎসব শ্রমিকরা যথাযথভাবে পালন করতে পারা তাদের অধিকার। শ্রমিকের কাঁধে ভর করে পোশাক শিল্প ও বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে, সেই শ্রমিকের জীবনে ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দও সুযোগ থাকে না। সারা বছর কাজ করিয়ে ঈদ এলেই মালিকদের তালবাহানা শুরু হয়। মালিকরা অর্ডার কম বলে অজুহাত দেয়। কিন্তু বাস্তবে সরকারি তথ্যসহ প্রতিটি কারখানায় যে মাত্রাতিরিক্ত অভার টাইম করানো হচ্ছে তা থেকেও বোঝা যায় মালিকদের অর্ডারের অভাব নেই।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মজুরি-বোনাস না দিয়ে উল্টো গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে ছাঁটাই করা বা কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন কারখানায় বকেয়া বেতন ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্রমিকরা স্থানীয় মাস্তান-পুলিশের হামলা ও মালিকের মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে। ঈদের সময় অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করে ঠকানোর চেষ্টা বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা।

বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবার ঈদে শ্রমিকরা বিপদজনক সড়ক ও বিপদজনক পরিবহনে বাড়ি ফেরে, কখনো দুর্ঘটনার শিকার হয়। কেউ ট্রাকে, কেউ ট্রেনের ছাদে, সিএনজিতে এমনি নানা ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে গাদাগাদি করে বাড়ি যেতে গিয়ে অনেককে আহত-নিহত হতে দেখা যায়। শ্রমিকদের নিরাপদে বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করতে নিরাপদ ও অতিরিক্ত পরিবহন ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।

বক্তারা সমাবেশের শেষ পর্যায় বলেন, শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থে বোনাস এবং বেতন নিশ্চিত করা জরুরি। ঈদ ১২ এপ্রিল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিকরা যাতে ছুটির প্রস্তুতি নিতে পারে তার জন্য ২০ রোজার মধ্যে শ্রমিকদের বেসিকের সমপরিমাণ বোনাস ও ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন ও অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে, শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত করবে।

বিক্ষোভ শেষে প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেসক্লাবে এসে মিছিল শেষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights