৫০টির বেশি দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে ইউনেস্কোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল, ফ্রান্স প্রতিনিধি

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক প্রতিনিধি ও ইউনেস্কো কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক এ সংস্থা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বহুভাষিকতার প্রচারের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষ এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা।
রাষ্ট্রদূত তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষা শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষার ইতিহাস এক রক্তাক্ত বেদনার ইতিহাস। বাঙালি জাতি তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের উদ্যোগ এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের ৮০টি কূটনৈতিক মিশন যারা স্থানীয় কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে দিবসটি পালনের মাধ্যমে মাতৃভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরে আসছেন। বিশ্বে প্রতি ৪০ দিনে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু এখনো তাদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।’

এ বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য হলো ‘বহুভাষিক শিক্ষা- একটি বহুভাষিক বিশ্বে শিক্ষাকে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তা’।

অনুষ্ঠানে ‘বহুভাষাবাদ’ এবং ‘ভাষার প্রতি ভালোবাসা’ প্রতিপাদ্যের ওপর দূতাবাস নির্মিত একটি অংশগ্রহণমূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যেখানে ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ৩৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেন। বাংলাদেশসহ ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সার্বিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী করেন।

অনুষ্ঠান শেষে ইউনেস্কো মিডিয়া সেন্টার সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ইউনেস্কো’র শিক্ষাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা, সহকারী মহাপরিচালক স্টেফানিয়া জিয়ান্নিনি, ফ্রান্সে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হাইফা আল মগরিন, ফ্রান্সে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত আদম আল মুল্লা, ফ্রান্সে নিযুক্ত সার্বিয়ার রাষ্ট্রদূত তামারা রাস্তোভাক সিয়ামাসভিলি ও ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত চার শতাধিক অতিথি বাংলাদেশ দূতাবাসের এ বর্ণাঢ্য আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সামাজিক রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করেন।

এ ছাড়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও দূতাবাসের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং দূতাবাসের অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। তাছাড়া শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর লিখিত বাণী পাঠ করা হয়। সেইসঙ্গে ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights