চট্টগ্রামে শ্বাসকষ্ট-ডায়রিয়ায় কাবু শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এর সঙ্গে আছে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, বমি, ব্রংকিওলাইটিস সহ নানা রোগ। অতীতে শীতের সময় শ্বাসকষ্টের শিশু রোগী বেশি দেখা গেলেও এবার ডায়রিয়ায় কাবু হচ্ছে বেশি। রোগী বৃদ্ধির কারণে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকটও দেখা দিয়েছে।

শীতকালে রোটা ভাইরাসও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে শীতে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে শয্যা আছে ৯৪টি। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর জন্য পৃথক শয্যা আছে ১০টি। কিন্তু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ জন এবং শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে দৈনিক নতুন করেই ভর্তি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ জন।

গত সোমবার চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় অনেকেই ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে শ্বাসকষ্টের রোগীরা মেঝেতে থাকলে সমস্যা আরও বাড়ার শঙ্কা আছে। এখানকার রোগী ফাহমিদা শারমিনের মা বলেন, ডায়রিয়া হওয়ায় মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছি তিনদিন আগে। এখন আগের চেয়ে একটু ভাল।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে শয্যা আছে ১১০টি। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর জন্য পৃথক শয্যা আছে ৪৫টি। গত সোমবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৫৫ জন শিশু। তাছাড়া, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৫০টি। এর মধ্যে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৪৫টি। গত সোমবার শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ভর্তি ছিল ২১২ জন।

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, অতীতে শীত শুরু হলে শিশুরা বেশি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলেও এবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। এর কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে আছে- শিশুরা রোটাভাইরাস টিকা গ্রহণ না করা, নোংরা পরিবেশ এবং বৈশ্বিক পরিবর্তন। তাই এখন সরকারি উদ্যোগে রোটাভাইরাস টিকা প্রদান করা সময়ের দাবি।

তাছাড়া, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো, নিরাপদ পানি পান ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেই ওরস্যালাইন খাওয়ানো জরুরি।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তাসনিম চৌধুরী বলেন, সাধারণত শীতকালে শিশুদের মধ্যে নানা রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে- ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, নানা ধরনের চর্ম রোগসহ বিভিন্ন রোগ। তাই শীতকালে শিশুকে যথাযথ গরম কাপড় পড়ানো, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, বেশি জনসমাগমপূর্ণ স্থানে না নেওয়া এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা থাকা। শিশুদের রোগ প্রতিরোধে এসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, শীত আসার পর থেকে ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ছে। অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে এবং ভর্তির মধ্যে শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি। গত সোমবার শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ২১২ জন রোগী ছিল। তবে অবস্থা এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights