কুষ্টিয়ায় টিসিবির পণ্যে অখুশি গ্রাহক, তেল চেয়ে ৫৭০ জনের আবেদন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

‘দোহান (দোকান) বন্ধ করে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ায় থাকে সিরিয়াল পালাম। তাও ডিলার আসল জিনিস তেল দিলো না। ২৭০ টাহা নিয়ে খালি ৫ কেজি চাল আর ২ কেজি ডাল দিল। এ নেওয়ার চেয়ে দোহানে চা বেঁচলেই লাভ হতো। ‘

রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলংগীপাড়া এলাকার চা বিক্রেতা মিজানুর রহমান টোনে।

তার ভাষ্য, তিন মাস আগে টিসিবির ডিলার ৪৭০ টাকা নিয়ে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মসুরের ডাল ও ২ লিটার সয়াবিন তেল দিতেন। কিন্তু বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিলাররা গত দুইমাস সয়াবিন তেল দিচ্ছে না।

গরীব মানুষ সাধারণত তেল আর ডালের জন্যই টিসিবির পণ্য নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে বলে জানান একই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ নারী হাজিরা খাতুন। তিনি বলেন, অন্যের বাড়ি কাম কাজ করে খায়। বাজারে দুই লিটার তেলের দাম ৩৫০ টাকা। তবে ডিলার আগে ২০০ টাকায় দুই লিটার তেল দিত। মানুষ কোনোমতে খায়ে বাঁচত। এখন খুব কষ্ট হচ্ছে।

শুধু মিজানুর আর হাজিরা খাতুন নয়, টিসিবির পণ্যে তেল না থাকায় চরম অখুশি এ উপজেলার প্রায় ১৩ হাজার ৬৩২ জন গ্রাহক। তাদের মধ্যে অন্তত ৫৭০ জন টিসিবির পণ্যে চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, আলু পেঁয়াজ প্রদানের দাবিতে রবিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষর করে লিখিত অভিযোগ দেন।

জানা গেছে, গত শনিবার কুমারখালী পৌরসভার নবগ্রহ মন্দির এলাকায় ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাহকদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিতরণ করেন ডিলার মো. রুবেল হোসেন ও উজ্জল হোসেন। টিসিবিতে তেল না থাকায় সেদিন ডিলার ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে ব্যাপক বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

লিখিত অভিযোগকারীদের মধ্যে পৌরসভার এলংগী এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ খান বলেন, অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, আলু, পেঁয়াজের দাম নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আবার ডিলার টিসিবিতে তেল বাদ দিয়ে নিম্নমানের চাল ও ডাল দিচ্ছে। আমরা টিসিবিতে সকল নিত্যপণ্য চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি।

গ্রাহকদের অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলার রুবেল হোসেন বলেন, আগে ৪৭০ টাকার বিনিময়ে চাল, ডাল ও তেল দেওয়া হতো। তেলের বরাদ্দ না থাকায় গত দুইবার ২৭০ টাকায় চাল ও ডাল দেওয়া হয়েছে। তবে তেল ছাড়া গ্রাহকরা পণ্য নিতে চায় না। হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে পণ্য বেঁচা লাগছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ডিলাররা।

মোট ১৩ হাজার ৬৩২ জন টিসিবির গ্রাহক রয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় তেল দেওয়া বন্ধ আছে। আজ গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তেলসহ অন্যান্য পণ্য দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights