নান্দাইলে বসুন্ধরা শুভসংঘের মানবিক উদ্যোগ: সেলাই মেশিন পেলেন ২০ নারী

অনলাইন প্রতিবেদক
“শুভ কাজে সবার পাশে”—এই স্লোগান সামনে রেখে অসহায় শিক্ষার্থী ও নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নান্দাইলের ২০ শিক্ষার্থী ও নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন প্রদান করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। দীর্ঘ তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের এসব সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে খুশি শিক্ষার্থী ও নারীরা। এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও রাজনৈতিক নেতারা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় নান্দাইল সদরে অবস্থিত সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজ চত্বরে অসচ্ছল ও অসহায় শিক্ষার্থী এবং নারীদের মধ্যে ২০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান, নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল চন্দ্র দত্ত এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন মাস্টার। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ জনের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন ইউএনও সারমিনা সাত্তার।

অসহায় এই নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিন মাসব্যাপী বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেলাই মেশিন পেয়ে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।

শিউলি আক্তার জানান, বিয়ে হওয়ার পর তিনি এই কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন। ইতিমধ্যে একটি সন্তান হয়েছে। তাঁর স্বামীর উপার্জনে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই অবস্থায় তিনি নিজেও একটি কাজ খুঁজছিলেন। পরে বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম লিখিয়ে পোশাক তৈরি শেখেন। এখন আশা করছেন, এই সেলাই মেশিন দিয়ে উপার্জন করতে সক্ষম হবেন এবং সংসারের অভাব দূর হবে। সেলাই মেশিন পেয়ে তাঁর স্বামীও খুশি।

রিকশাচালকের মেয়ে তামান্না আক্তার বলেন, জমজ বোনসহ তাঁরা তিনজন। বাবা অসুস্থ হয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় দুই বোন একসঙ্গে সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ফলে পড়ালেখা হুমকির মুখে পড়েছিল। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়ে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে কাঙ্ক্ষিত মেশিন পেয়েছেন। এখন আয় করে দুই বোনের পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারে সাহায্য করতে পারবেন।

বিএনপি নেতা ও স্থানীয় সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, “ঘটনাটি দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। এটাও কি সম্ভব? আমার দেখা মতে, বসুন্ধরাই সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরাই এখন মানবিকতার কাজ করছে। অন্যদের উচিত তাঁদের দেখে শিক্ষা নেওয়া।”

নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল চন্দ্র দত্ত বলেন, “আমরা শুধু নিতে জানি, দিতে জানি না। কিন্তু বসুন্ধরা শুভসংঘ বিনা অর্থে প্রশিক্ষণ শেষে উন্নত মানের সেলাই মেশিন দিয়েছে, যা অকল্পনীয়। আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।”

নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান বলেন, “অসহায় এসব শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো। তাঁরা এই মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন, সেটি কিছুটা হলেও তাঁদের সংসারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।”

সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, “বসুন্ধরা যা করেছে, তা আমার কাছে অতুলনীয়। আমার কলেজের অসহায় হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে পড়ালেখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ শেষে যেভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে, তা অনেক বড় পাওয়া। আমি বসুন্ধরাকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, “আমি পাশের উপজেলা থেকে সদ্য বদলি হয়ে এসেছি। আগের কর্মস্থলেও বসুন্ধরা শুভসংঘের কর্মতৎপরতা দেখেছি। তাঁরা মানবতার জন্য কাজ করেন। তাঁদের পাশে থাকতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। এখানে এসে একই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে আমি অভিভূত। আমি বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে কাজ করতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “যেভাবে বসুন্ধরা অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা দেখে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।”

এর আগে ২০২২ সালে উপজেলার আঁচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামে প্রথমবারের মতো ২০ জন অসচ্ছল নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সবাই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights