ঈদ আসলে কেঁদে বুক ভাসে প্রবাসীদের

আরব আমিরাত প্রতিনিধি:

পরিবার ও স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন সত্যি অন্য রকম এক আনন্দের। কিন্তু সেই আনন্দ স্পর্শ করতে পারে না প্রবাসীদের। এই আনন্দের কোনো ছিটেফোঁটাও থাকে না এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধার মাঝে। এরপরও শত কষ্ট নিয়ে পরিবারকে বলে- ‘হ্যা আমি ভালো আছি।’

ঈদ মানে খুশী, ঈদ মানে আনন্দ- এ কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। সচ্ছল হওয়ার তাগিদে পাড়ি জমান তারা। এই কারণে জীবনের অনেক স্বাদ ত্যাগ করেন তারা। বছরের পর বছর রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রবাসীরা। একদিকে দেশ, অন্যদিকে পরিবার- দুটোর সমৃদ্ধিতে নিজের অংশগ্রহণ থাকলেও পারিবারিক বা ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে অংশ নিতে পারেন না অধিকাংশ প্রবাসী। ঈদ এলে তাই বুকে কষ্ট চেপে মুখে কেবল কৃত্রিম হাসি ধরে রাখেন তারা।

কেমন কাটে প্রবাসীদের ঈদ আনন্দ?
ঈদের দিন সকালে আমিরাতে আজমান প্রদেশে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় একটি বাংলাদেশি শিল্প কারখানায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কোনো কোনো প্রবাসী দশ বছরে মাত্র একবার দেশে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছেন। অনেকে আবার ঈদের দিনও ছুটি নেই। নিয়োজিত থাকেন নিজের কর্মস্থলে। এমন দিনে কেউ কেউ ইচ্ছে করেই কাজের ব্যস্ততায় নিজের কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ এই দিনে প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে দেশের স্মৃতি। চেনা মুখগুলোর না দেখতে পারার কষ্ট। অনেকেই ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দেশের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আলাপচারিতায়। এই আলাপে কারো কারো চোখ ভরে আসে জলে। থাকে দেশে পরিবারের সাথে ঈদ না করতে পারার আক্ষেপও।
এমনই একজন প্রবাসী আজিজ বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছি। কিন্তু শুধু একবার পরিবার মা বাবা ও বাচ্চাদের সাথে রমজানের ঈদ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না প্রবাসে কি দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করি আমরা।

গার্মেন্টস কারখানায় কাটিং মাস্টার আবু তাহের বলেন, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর যখন আসে, পরিবারকে অনেক মিস করি। এটি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সবাইকে অনেক মিস করি। ১৯৯৮ সালে থেকে এখন পর্যন্ত একটি ঈদ করতে পেরেছি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ নসিবে রাখেনি।

মোহাম্মদ দেলোয়ার বলেন, প্রত্যেকের জীবনে এমন আনন্দমুহূর্ত দিন আসে। সবার সাথে পরিবার পরিজন ও ভাই বোনদের সাথে ঈদ আনন্দের দিনগুলি কাটাবো। কিন্তু আমাদের প্রবাসে মানুষদের কাছে এমন দিন আসে না। এই দিনে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights