খেলাপির বোঝায় চরম শঙ্কা

আগামী মার্চে নতুন নিয়ম চালু হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি। তাই ঋণখেলাপি করার নতুন নিয়ম চালুর জন্য অন্তত এক বছর সময় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী মাস থেকে এক কিস্তি না দিলেই খেলাপিতে পরিণত হবে ঋণ। এখনই এই নিয়ম কার্যকর করা হলে ঋণখেলাপি হয়ে যাবেন দেশের বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্পকারখানা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছয় থেকে নয় মাস ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে সেটা সন্দেজনক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। আর মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো নয় মাস পেরিয়ে গেলে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই নিয়মের পরিবর্তন করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে কিস্তি পরিশোধের সময়মীমা নামিয়ে আনা হয়েছে ৯০ দিনে। আগামী মার্চ মাস থেকেই একবার কিস্তি পরিশোধ না করলেই খেলাপির খাতায় নাম ওঠার নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঋণখেলাপি করার ক্ষেত্রে বর্তমানে চালু থাকা ছয় মাসকে আমাদের যথেষ্ট সময় বলে মনে হচ্ছে না। সেখানে সময় কমিয়ে আনাকে আমরা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করছি না। বর্তমানে যে নিয়ম আছে, তাতেই অনেকেই ঋণখেলাপি হচ্ছেন। কারণ, টিকে থাকার সক্ষমতা নেই বলেই খেলাপি হচ্ছেন।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যে কোনো ঋণগ্রহীতা যে কোনো সময় একটা কিস্তি খেলাপি হতে পারেন এবং হবেনই। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে ব্যবসায়ীরা যখন আইসিইউতে আছে তখন। এটা অসম্ভব। সুতরাং ঋণখেলাপির নীতিমালা যেটা হচ্ছে এটাতে ব্যবসায়ীদের গলাটিপে হত্যা করা হবে। বহু ব্যবসায়ী শেষ হয়ে যাবে। তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায়। যা ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাব অবলোকন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন নিয়ম চালু হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। বন্ধ হতে পারে শিল্পকারখানা ও কর্মসংস্থান। এমন পরিস্থিতিতে নতুন নিয়ম চালুর ক্ষেত্রে অন্তত এক বছর সময় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমি মনে করি অধিকাংশ কারখানা নতুন নিয়মের আওতায় আসার পর বন্ধ হয়ে যাবে। যা আমাদের রপ্তানির জন্য অনেক বড় ধরনের হুমকি। দ্রুত এটার একটা সমাধান করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঋণখেলাপি করার আগের নিয়মটাকে আরও এক বছর বহাল রাখার অনুরোধ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি একটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে নতুন নিয়ম কার্যকরের দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আমলে নেবে কি না, সেটা তাদের বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৩০ শতাংশ বা ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা অতিক্রম করে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights