দেবতা ভেবে ডাইনোসরের ডিমের পূজা করছিল ভারতের এক গ্রামের বাসিন্দারা!

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের মধ্য প্রদেশের ধার জেলা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। ওই জেলারই অন্তর্গত পাড়ল্যা গ্রামের বাসিন্দাদের কুলদেবতা ‘কাকর ভৈরব’। তারা বংশপরম্পরায় কাকর ভৈরবের পূজা করে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে।

তাদের বিশ্বাস শিলাকৃতির কাকর (যার অর্থ জমির সীমানা) ভৈরব (ঈশ্বর) জমি ও গবাদি পশুর রক্ষা করেন এবং দুর্দশা নির্মূল করেন।

কিন্তু ওই ভীল সম্প্রদায়ের অনেকের ধারণাই ছিল না, যে গোলাকৃতি শিলাটি তারা নিজেদের চাষাবাদের জমির সীমানায় রেখে পূজা করছেন, সেটা আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম!
পাড়ল্যার বাসিন্দা ভেস্তা মান্দোলাই বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমরা জানতামই না, ওই শিলা আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম। কত বছর ধরে আমারা কাকর ভৈরবের পূজা করে আসছি তার ইয়ত্তা নেই।”

তিনি আরো জানান, ‌‘আশপাশের অঞ্চলের কোথাও কোথাও কাকর ভৈরবকে ভিলেট বাবা বলেও পূজা করা হয়। আমাদের গ্রামের ছেলেরা কোথাও থেকে গোলাকৃতি শিলা যেগুলো অন্যান্য পাথরের থেকে আলাদা সেরম কিছু খুঁজে পেলে নিয়ে এসে পূজা করত। কেউ কী আর জানত, ওগুলো আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম!’

নর্মদা ভ্যালি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খননকার্য হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ডাইনোসরের ‘নেস্টিং সাইট’, ‘নেস্ট’, তাদের ডিমের জীবাশ্ম, হাঙরের দাঁতের জীবাশ্ম আরও অনেক কিছু উদ্ধার করেছেন জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা। পদার্থবিদ্যার শিক্ষক বিশাল ভার্মা সেই বিশেষজ্ঞদের একজন। এ পর্যন্ত তিনি ২৫৬টি ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার করেছেন।

বিশাল ও তাঁর মতো অন্যান্য জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞদের নিরলস প্রয়াসের ফলে ওই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভূতত্ত্বগত গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ জেনেছে। পাড়ল্যা ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা জীবাশ্ম হতবাক করেছে ভেস্তা-সহ ভীল সম্প্রদায়ের অনেককেই।

তারা জেনেছেন, গোলাকার শিলা যাকে বংশপরম্পরায় পূজা করা হয়, সেটা আসলে টাইট্যানো-স্টর্ক প্রজাতির ডাইনোসরের ডিম!

দিন কয়েক আগে বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওসায়েন্সস-এর (বি‌এসআইপি) বিশেষজ্ঞদের একটি দল ধার জেলা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া ফসিল ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির সংরক্ষণ।

একই সঙ্গে ইউনেস্কো-র কাছে ধার জেলাকে ‘গ্লোবাল জিও পার্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব পেশ করাও ছিল তাদের লক্ষ্য। সেসময় বি‌এসআইপি’র ওই দলে ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর ড. মহেশ জি ঠক্কর, ড. শিল্পা পাণ্ডে, মধ্য প্রদেশ ইকো ট্যুরিজম বোর্ড-এর সিইও শমিতা রজৌরা, বন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশাল ভার্মা।

এ বিষয়ে শিল্পা পান্ডে বলেন, ‘বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওসায়েন্সেস-এর সেন্টার ফর প্রোমশন অফ জিও হেরিটেজ অ্যান্ড জিওট্যুরিজম প্যালিওসায়েন্টিস্ট-এর তরফে আমরা ধার ও সংলগ্ন অংশে গিয়েছিলাম এই মাসে। এর আগে ২৫৬টি ডাইনোসরের ডিম পাওয়া গিয়েছে যা নথিভুক্তও করা হয়ে গিয়েছে।’ ‘মধ্যপ্রদেশের মনাবরের কাছে একাধিক জায়গা আছে, যেমন আখড়, কন্যাপুর ইত্যাদি যেখানে ওই নেস্টিং সাইট পাওয়া গিয়েছে। আমরা জানতে পারি গত জুন মাসে পর্যন্ত ধার অঞ্চলে ২০টি নতুন নেস্ট-এর খোঁজও মিলেছে।’

তিনি জানিয়েছেন, ‘জীবাশ্ম ও যে নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে সেগুলো পাওয়া গেছে তার সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সে বিষয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, উদ্ধার করা ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্মগুলোকে সেখানকার মানুষ দেবতা ‘কাকর ভৈরব’ হিসেবে পূজা করেন।’

ড. শিল্পা পাণ্ডে বলেন, ‘এখানে বংশপরম্পরায় এই পূজা হয়ে আসছে। দীপাবলির সময়, এখানকার মানুষেরা, তাদের জমির একটা অংশে কাকর ভৈরব প্রতিষ্ঠা করে সন্তানসম্ভবা গবাদি পশুদের ওই শিলার উপর দিয়ে লাফ দিয়ে পার হতে বলেন। তাদের বিশ্বাস এতে সন্তানসম্ভবা পশুটার আগত শিশুরা সুস্থ হবে, ফলে মালিকের ভবিষ্যতও সুরক্ষিত থাকবে। একই সঙ্গে সমস্ত ফাঁড়াও কাটবে।’

এর পরেই শুরু হয় সেখানকার স্থানীয় মানুষদের বোঝানো। তার কথায়, ‘যে অঞ্চল থেকে ডাইনোসরের ডিম পাওয়া গিয়েছে তার শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভূতাত্ত্বিক মূল্য রয়েছে, তা কিন্তু নয়। একই সঙ্গে এই সাইটগুলোর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বও রয়েছে।’

বি‌এসআইপি-র ডিরেক্টর ড. ঠক্কর আরো বলেন, ‘এই যে, টি-রেক্স সম্পর্কে আমরা এত কথা শুনি। কয়েক কোটি বছর আগে নর্মদা ভ্যালিতে কিন্তু মাংসাশী ডাইনোসর ছিল, যাকে রাজাসোরাস নরমাডেন্সিস বলা হয়। সে সম্পর্কে পৃথিবীকে জানানো আমাদের কর্তব্য।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights