অভয়াশ্রমেই বিলুপ্তির পথে মাছ
শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট
সিলেটে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি রক্ষা ও দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয়টি জলাশয়কে ‘মৎস্য অভয়াশ্রম’ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাব এবং সুফলভোগীদের অসহযোগিতায় ইতোমধ্যে এদের তিনটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নামেমাত্র যে তিনটি অভয়াশ্রম রয়েছে সেগুলোতেও মাছের সুরক্ষা ও বংশবৃদ্ধির পরিবর্তে চলছে অবাধে নিধন। ফলে অভয়াশ্রমেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ। সুফলভোগীদের সহযোগিতা ও ইজারা বন্ধ করা না গেলে অভয়াশ্রমগুলো কাজে আসবে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুলবুলির খাল, ওসমানীনগরের জাফারখাল, একই উপজেলার সাদিখাল, জকিগঞ্জের কুলগাঙ, গোয়াইনঘাটের গোয়াইন নদীর একটি অংশ ও কোম্পানীগঞ্জের পিয়াইন নদের অংশকে ‘মৎস্য অভয়াশ্রম’ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে জাফারখাল এবং পিয়াইন ও গোয়াইন নদের অংশের অভয়াশ্রম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশিষ্ট তিনটি অভয়াশ্রমের পাশাপাশি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মৎস্য অধিদপ্তরের ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জৈন্তাপুরের বড়বিলের ১ হেক্টর (ভেলি বিল) এলাকাকে নতুন অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মৎস্য অফিস সূত্র আরও জানায়, দেশি মাছের নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভয়াশ্রমগুলো করা হলেও স্থানীয় সুফলভোগীরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন না। অনেকে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন। সরকারিভাবে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়রা অভয়াশ্রম থেকে অবাধে মাছ ধরছেন। এতে অভয়াশ্রমেই হুমকির মুখে পড়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ।
সূত্র আরও জানায়, অভয়াশ্রমে ঢেলা, সরপুঁটি, বামুস, গুলশা, পাবদা, বাঘাইড়, বোয়াল, বাইম, রানি, চেলা, চাপিলা, গাগলা, পুটা, রিটাসহ দেশি প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য নিধন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। অভয়াশ্রম রক্ষায় স্থানীয় পর্যায়ে সুফলভোগীদের নিয়ে কমিটিও গঠন করা হয়। অভয়াশ্রম তদারকি ও সুফলভোগীদের সঙ্গে সমন্বয়কের কাজ করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু কাগজে কলমে এসব নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে তার চিত্র পুরো উল্টো। কেবল একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো ছাড়া মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষায় প্রশাসনকে দৃশ্যমান আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অভয়াশ্রমগুলোতে বছরজুড়ে চলে মাছ শিকার। মাছ লুটের সঙ্গে অভয়াশ্রম রক্ষা কমিটিরও অনেক সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রানি বিশ্বাস জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে কয়েকটি অভয়াশ্রম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো যেগুলো আছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব সুফলভোগীদের। তাদের দিয়ে স্থানীয়ভাবে কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক স্থানে সুফলভোগীরাই অভয়াশ্রমে মৎস্য শিকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া স্থানীয়দের দাবি, উজানে বাধা দেওয়ায় ওই অভয়াশ্রম ভরাট হয়ে গেছে। এটি খনন করা গেলে অভয়াশ্রম থেকে সুফল পাওয়া যেত। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অভয়াশ্রমগুলো অনেক সময় ইজারা দেওয়া হয়। মাছের উৎপাদন বন্ধ করতে হলে ইজারা বন্ধ করতে হবে। কারণ ইজারাদার শর্ত লঙ্ঘন করে মাছ ধরেন। এতে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়।’