বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস
বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস। এ ধরনের বিপুল পরিমাণ পণ্য পড়ে আছে বন্দরে, যা তৈরি করছে অগ্নিকান্ড, বিস্ফোরণসহ দুর্ঘটনার শঙ্কা। আমদানির পর খালাস না নেওয়া এসব পণ্য নিলামে বিক্রির চেষ্টা চললেও তাতে প্রত্যাশিত গতি নেই। এর মধ্যে অনেক পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলো ধ্বংসের কার্যক্রমও আটকে আছে নানা জটিলতায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘পি’ শেডে রাখা কেমিক্যালসহ বিপজ্জনক মালামালের পরিমাণ ১১৫ প্যাকেজে ৩৩৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরনো ও বিপজ্জনক পণ্যের পরিমাণ ৬৫টি প্যাকেজের আওতায় ৫৯ মেট্রিক টন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইয়ার্ডে ২২৮টি পুরনো বিপজ্জনক পণ্যবোঝাই কনটেইনার রয়েছে যার মধ্যে ৪৬টি খুবই জরাজীর্ণ। ঝুঁকি বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৪টি কনটেইনার গত মাসে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। অপর ৮টি যত দ্রুত সম্ভব ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে এ কাজে এখনো সফলতা আসেনি। দেশে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক চেষ্টার পরও এগুলো ধ্বংস করা যায়নি। এখন দ্বারস্থ হতে হচ্ছে অন্য দেশের। শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে এসব কনটেইনার ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। কনটেইনারগুলো ২০০৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আমদানি হয়েছিল। থিনার, এসিটিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিডসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক রয়েছে এগুলোতে। জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশেই বিপজ্জনক পণ্যবোঝাই ৮টি কনটেইনার ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এ কাজের জন্য তারা উপযুক্ত স্থান ও প্রতিষ্ঠান পায়নি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে রাজি হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি অনেক বেশি অর্থ দাবি করায় কাস্টমস শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিপজ্জনক পণ্যের ৮টি কনটেইনার ধ্বংসের চেষ্টা করছি আমরা। এ ধরনের পণ্য ধ্বংসে যে প্রযুক্তি ও স্থানের প্রয়োজন হয়, তা নেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা ৪১ কোটি টাকা চেয়েছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে। ধ্বংস করতে না পেরে কনটেইনারগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। তারাই এখন ধ্বংসের চেষ্টা করছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল। সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কাজ করতে হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এর আগে লাফার্জ সিমেন্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা কিছু বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস করেছিলাম। তাও ছিল ব্যয়বহুল।