বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা ১১ দিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির কর্মসূচিতে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল হয়ে পড়েছে। প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল, সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে এই কর্মবিরতি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা। দাবি আদায়ের জন্য সরকারপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের জন্য, পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হবে, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। প্রত্যয় স্কিম থাকবে না এটা আমি নিশ্চিত। কারণটা হলো আলোচনায় বসা মানেই উনারা জানেন এর পক্ষে কোনো যুক্তি দেখানো যাবে না।’ টানা আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গনে চলমান স্থবিরতার বিষয়ে এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষক হয়ে ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুমে রাখছি না, তাদের ল্যাবরেটরিতে রাখতে পারছি না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্ত তাদের স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এই ক্ষতিটা সামান্য ক্ষতি মনে হবে যদি তারা জানে পরবর্তী জেনারেশনের জন্য এটা কত সর্বনাশা প্রস্তাব আসছে, যেখানে মেধাবীরা এই পেশায় আসবে না, তারা প্রস্তুত হবে না। কাজেই আমাদের দাবি মেনে নেওয়াটাই এখন যুক্তিযুক্ত।’ শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মমিন উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সমাধান আসেনি। আশা করছি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে, আমরা দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারব। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় উৎসাহিত করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধা ঠিক রাখতে হবে।

এদিকে শিক্ষকদের টানা কর্মসূচিতে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগীয় অফিস, সেমিনার কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগারের তালাও খুলছে না। শিক্ষকদের ডাকা কর্মসূচির পাশাপাশি কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও। সব মিলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাসও পাননি শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের এই সময়ে বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিও। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস এমনকি শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে শিক্ষক আন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগারের তালাও খোলেনি। সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এ অচলাবস্থার কারণে সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আমাদের জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকরা জানান, প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সোহেল হাসান আক্ষেপ করে বলেন, ‘আর কত? এ দেশ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই স্বাধীন হয়েছে। অথচ সেই বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে। তাহলে কি আরেকটা যুদ্ধ দরকার?’ এ অধ্যাপক বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের সম্মান দিয়েছেন। তিনি উচ্চমর্যাদা দিয়ে স্যার সম্বোধন করতেন। অথচ দিনের পর দিন শিক্ষকরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন, কিন্তু তাঁরই কন্যা এ শিক্ষকদের ডেকে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছেন না!’ দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুকৃবি) শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালিত হয় গতকাল। কর্মবিরতির কারণে সব ডিসিপ্লিনের ক্লাস, অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস, মিডটার্ম, ফাইনাল, ভর্তি পরীক্ষাসহ দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম ফিরোজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক বক্তব্য দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) শিক্ষকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. দেবাশিস চন্দ্র আচার্য্য গতকাল অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, তিন দফা দাবি আদায় পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। দ্রুতই সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পেনশন স্কিম বিধিমালা থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বানে শিক্ষক সমিতি এ কর্মবিরতি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুজ্জামান, প্রভাষক মোহাম্মদ সানাউল্লাহসহ অন্যরা এতে বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights