রাশিয়া সফরে মোদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা, কিন্তু পশ্চিমা মিত্রদের ক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সফরকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মোদি গত সোমবার মস্কো পৌঁছান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় মেয়াদে প্রথম বিদেশ সফর। মস্কোতে পৌঁছে পুতিনের বাসভবনে মোদি এবং পুতিন এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এর পরদিন, ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৪১ জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন।

সফরের প্রথম দিন, পুতিন এবং মোদি পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন এবং বৈদ্যুতিন গাড়িতে চড়ে ঘোড়ার আস্তাবল পরিদর্শন করেন। এ সময়েই রাশিয়ার প্রাণঘাতী হামলা ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে তীব্র আঘাত হানে।
জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতাকে এমন দিনে মস্কোতে পুতিনকে আলিঙ্গন করতে দেখা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং এটি শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি আঘাত।’

মস্কোয় প্রবাসী ভারতীয়দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি মোদি। তবে তিনি ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কের প্রশংসা করেন এবং ইয়েকাতেরিনবার্গ ও কাজানে দুটি নতুন কনস্যুলেট খোলার ঘোষণা দেন।

মোদি বলেন, রাশিয়ার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে হলেও সেটা কোনো বিষয় নয়, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক সব সময় ঊর্ধ্বমুখী। এই সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

এএফপি জানায়, নয়াদিল্লি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের মিত্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। রাশিয়া ভারতকে ছাড়মূল্যে তেল এবং অস্ত্র সরবরাহ করে। তবে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এবং চীনের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার ফলে মস্কোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা জটিল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বেইজিংয়ের প্রভাব কমাতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাপ দিয়ে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘মোদি কী নিয়ে আলাপ করেছেন, সেটা জানতে তিনি প্রকাশ্যে কী মন্তব্য করেন, আমি সেটার ওপর নজর রাখব। তবে আমি যেটা বলতে চাই, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি ভারতকে আমরা স্পষ্ট করেছি।’

মিলার বলেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় মোদির এ বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত যে, ইউক্রেন সংঘাতের যেকোনো সমাধানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সনদ এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে।

ভারত এখনো ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সরাসরি নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে এবং জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেও ভোটদানে বিরত থেকেছে।

এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হামলায় হতাহতের ঘটনায় ইউক্রেন সরকার এক দিনের শোক দিবস ঘোষণা করেছে। মস্কো বারবার ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights