আজ চতুর্থ দফার ভোট হচ্ছে
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
ভারতের সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর আজ চতুর্থ দফার ভোট হচ্ছে। এ ধাপে ১০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৯৬টি সংসদীয় আসনে ভোট নেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলো হলো অন্ধ্রপ্রদেশের (২৫), তেলেঙ্গানা (১৭), উত্তরপ্রদেশ (১৩), মহারাষ্ট্র (১১), পশ্চিমবঙ্গ (৮), মধ্যপ্রদেশ (৮), বিহার (৫), ঝাড়খন্ড (৪), ওড়িশা (৪) এবং জম্মু-কাশ্মীর (১)।
লোকসভার পাশাপাশি এদিন অন্ধ্রপ্রদেশের ১৭৫ আসনে এবং ওড়িশার ২৮টি আসনে বিধানসভার ভোট নেওয়া হবে। ভোট শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। কোনো রকম বিরতি ছাড়াই তা চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ভোট নেওয়া হবে ইভিএমে। ভোট গ্রহণের জন্য গোটা দেশে ১ লাখ ৯২ হাজার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ দফায় মোট ১৭১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও সেলিব্রিটি প্রার্থীরাও। দেশজুড়ে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, তিনি লড়বেন উত্তরপ্রদেশের কনৌজ আসন থেকে। এ আসনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির সুব্রত পাঠক। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর কেন্দ্র থেকে লড়ছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এ কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, আসানসোল কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, বীরভূম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী ওমর আবদুল্লাহ, বিহারের বেগুসারাই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, ঝাড়খন্ডের কুন্তী কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মাধবী লতা এবং এ কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসি।
২০১৯ সালের নির্বাচনে এ ৯৬টি কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি সর্বাধিক ৪২ আসনে জয়ী হয়েছিল। এর মধ্যে ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ আসনে, ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি ৯ আসনে, কংগ্রেস ৬ আসনে, তৃণমূল কংগ্রেস ৪ আসনে, তেলেগু দেশম পার্টি ৩ আসনে, বিজু জনতা দল, এআইএমআইএম এবং শিবসেনা ২টি করে আসনে জয় পেয়েছিল। এনসিপি, এলজেপি, জনতা দল ইউনাইটেড, ন্যাশনাল কনফারেন্স ১টি করে আসনে জয় পেয়েছিল। এ দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৮টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এগুলো হলো বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম। এর মধ্যে তৃণমূলের ৫টি, বিজেপি ২টি এবং কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ১টি আসন। এ দফায় রাজ্যটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ১৭ জন, যার মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৮২ জন। এ দফায় রাজ্যটিতে মোট ৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে দেশজুড়ে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলোতে থাকছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়াও নির্বাচন কেন্দ্রিক যে কোনো অশান্তি রুখতে প্রস্তুত থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, ফ্লায়িং স্কোয়াড, ভিডিও সার্ভেলেন্স টিম, স্ট্যাটিক সার্ভেলেন্স টিমের সদস্যরা। এ দফায় বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া জেলার কিছু কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে বিএসএফকে। ১৩ মে চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণকে সামনে রেখে গত শুক্রবার এবং শনিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় পরিদর্শন করেন বিএসএফের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ইস্টার্ন কমান্ড) রবি গান্ধী। বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সীমান্ত নাশকতা ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজর রাখার পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পূর্ণ সিল করার নির্দেশ দেন।