আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)

পৃথিবী নিজ থেকে ছড়িয়ে পড়া কোনো জঙ্গল নয়, বরং একজন মহান মালির পরম যত্নে গড়ে তোলা সুপরিকল্পিত বাগান। মানুষ এই বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান ফুল। এই ফুল হাজারো বাগানের নির্যাস থেকে তৈরি। জগতের শ্রেষ্ঠতম ফুল মানুষকে উদ্দেশ্যহীনভাবে তৈরি করা হয়নি যে, সে যেনতেনভাবে জীবন কাটিয়ে যাবে। তার জীবন ও জীবনকাল অমূল্য। মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন মনুষ্যত্ব। যার মূল্য কেবল মহান স্রষ্টাই নির্ধারণ করতে পারেন। মনুষ্যত্ব পূর্ণতা পায় মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও নিঃশর্ত আনুগত্যের মাধ্যমে।

একইভাবে মানুষের ভেতরের সীমাহীন চাহিদা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অন্তরের অস্থিরতা পুরো পৃথিবী মিলেও দূর করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর সস্তা উপাদানগুলো তাঁর উপযোগী নয়। তাঁর জন্য প্রয়োজন অন্তহীন জীবন ও সীমাহীন এক জগত। যে জগতের সামনে পার্থিব জগত এক ফোটা জলতুল্য। যে জীবনের আনন্দ ও বেদনার সঙ্গে এই জীবনের আনন্দ ও বেদনার কোনো তুলনাই হয় না। মানুষের সঙ্গে তার মহান স্রষ্টার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আল্লাহর সঙ্গে এক অদৃশ্য সম্পর্কের বন্ধনে মানুষ আবদ্ধ। তাই মানবপ্রকৃতির দাবি হলো এক ও অদ্বিতীয় ইলাহের উপাসনা করা, তাঁর সন্তুষ্টি অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরকালের অন্তহীন জীবনের জন্য চেষ্টা করা।

এই উদ্দেশ্য অর্জনে মানুষকে কোনো আত্মা, কোনো অদৃশ্য শক্তি, গাছ বা পাথর, কোনো জড় ও প্রাণ, কোনো সহায়-সম্পদ, কোনো মান-সম্মান, শক্তি ও সামর্থ্য, আধ্যাত্মিক ও সম্মানিত ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে হবে না। তাদের সামনে লতাগুল্মের মতো অবনত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা মানুষ ও মানবসত্তার সম্মান এসবের ঊর্ধ্বে। সে কেবল এক মহান সত্তার সামনে মাথা ঝোঁকাবে, সেজদায় অবনত হবে। এর বিনিময়ে সে সৃষ্টিজগতে অনন্য সম্মানে ভূষিত হবে। সে হবে এক মহান সত্তার সেবক এবং বাকি সব জগতের সেবাগ্রহীতা। তাঁর সামনে ফেরেশতারা সেজদাবনত হয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্তার সামনে তাঁর সেজদার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সৃষ্টিজগতের যাবতীয় শক্তির বাহক ও শৃঙ্খলার ধারক ফেরেশতারা তাঁর সামনে সেজদায় অবনত হয়েছে। কেননা সে কেবল মহান আল্লাহরই সেজদা করবে।
তামিরে হায়াত থেকে অনূদিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights